বিনিয়োগ খরার মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। গত ৩০ জুন প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গত ২২ বছরের যে তথ্য রয়েছে, এ প্রবৃদ্ধি তার মধ্যে সর্বনি¤œ। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে একবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছিল। এর আগে কভিড অতিমারির মধ্যেও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল। এ রকম অবস্থার মধ্যে আগামী ৩১ জুলাই চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে সুদের হার কমানো, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন এবং ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্প খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নীতিমালার মতো বিষয়গুলোয়ও নজর দিতে হবে। উচ্চ সুদহার বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণে নিরুৎসাহিত করে। তাই ঋণপ্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমবে এবং ব্যাংকগুলো আরও বেশি ঋণ প্রদানে উৎসাহিত হবে।
শিল্প খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিদ্যুতের মূল্য স্থিতিশীল থাকলে এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত হলে, শিল্প কারখানার উৎপাদন খরচ কমে আসবে, যা তাদের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে।
বাণিজ্য, আমদানি, মুনাফা, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি ও চাকরিÑসবই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা চান দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, যাতে ব্যবসার খরচ ও পরিবেশ সহজ হয়।
ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দেশে একটি পূর্বানুমানযোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে, যার মাধ্যমে বেসরকারি খাত ন্যায্য প্রতিযোগিতা করে বিকশিত হতে পারবে।
সমস্যা সমাধান করতে হবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ব্যবস্থা ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। কারখানা বা সড়ক বন্ধ বা অবরোধ করে নয়, বরং ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরকারকে শিল্পের সমস্যা উত্থাপন ও সমাধানের পথ বের করতে হবে।
অবশ্যই সরকারকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যে ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন, তাদের ব্যবসা পরিচালনায় অর্থের প্রয়োজন। তাদের জন্য ব্যবসা সহজ করার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং বেসরকারি খাতকে নীতি ও অর্থসহায়তা দিতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সময়মতো ঋণ না পেলে টিকে থাকতে পারবে না। সরকারকে বেসরকারি বিনিয়োগ চাঙা করতে উদ্যোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, নতুন বিনিয়োগ না এলে কর্মসংস্থান বাড়ানো যাবে না। কারণ সরকারি বিনিয়োগে খুব বেশি কর্মসংস্থান হয় না। সর্বোপরি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ব্যাংকগুলো বড় শিল্পকে ঋণ দিতে আগ্রহী হলেও এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না। এই বাধা দূর করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।