সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান সহায়ক খাত বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি)। এ ডিপোতে বর্তমানের চেয়েও কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাশে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা); যা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নতুন সংকট দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিকডা সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে আইসিডিগুলো আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে আসছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি, যন্ত্রপাতির ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধিসহ ক্রমবর্ধমান ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পূর্বের হারে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেনারের ক্ষেত্রে স্টাফিংয়ে ৬০ শতাংশ এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে ৩০ শতাংশ দর বৃদ্ধি করে ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন হারে চার্জ আদায় করা হবে। এ নতুন হার অনুযায়ী ২০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে প্যাকেজ চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ টাকা, ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য ১৩ হাজার ২০০ টাকা এবং ৪০-৪৫ ফুট কনটেইনারের জন্য ১৪ হাজার ৯০০ টাকা চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। খালি কনটেইনারের হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রেও চার্জ বাড়ানোর কথা রয়েছে। এতে গ্রাউন্ড রেন্ট ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ১৫০ টাকা, ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবহন চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য আড়াই হাজার টাকা, ৪০ ফুট ও ৪৫ ফুটে ৫ হাজার টাকা, সর্বপ্রকার কনটেইনারের ডকুমেন্টেশন ফি সাড়ে চারশ টাকা। লিফটুঅন/লিফটুঅফ সাড়ে ৭০০ টাকা। এছাড়া ভিজিএম চার্জ, শ্রমিক খরচ, প্লাগ-ইন ফি, জিওএইচ চার্জ, কার্গো ও অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও চার্জ বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছে বিকডা।
বর্তমানে প্যাকেজ চার্জ (স্টাফিং থেকে বন্দরে প্রেরণ পর্যন্ত) ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ছয় হাজার ১৮৭ টাকা, ৪০ ফুট এবং ৪৫ ফুট কনটেইনারের জন্য আট হাজার ২৫০ টাকা, গ্রাউন্ড ভাড়া (প্রতিদিন) ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ১১৫ টাকা ৪০ ও ৪৫ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ২৩০ টাকা আদায় করা হয়।
নতুন চার্জ কাঠামো ঘোষণার পর থেকে দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোয় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষত তৈরি পোশাকশিল্প যারা ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ধাক্কা সামলে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য রপ্তানি করে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, তারে জন্য এটি বড় সংকট সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের বিশ্ববাজারে অবস্থান ধরে রাখার যে নিরন্তর চেষ্টা, বিকডার এই মূল্য বৃদ্ধি তাতে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে বলে একাধিক গার্মেন্টস মালিক মন্তব্য করেছেন।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বাড়তি খরচ সরাসরি পণ্যের ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে যেখানে ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়ার মতো শে কম খরচে রপ্তানি সুবিধা দিচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত চার্জ বাংলাদেশের রপ্তানিকে ঝুঁকিতে ফেলবে। এমনতি আমারে জন্য আমেরিকায় শুক্ত প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বেশি।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য বর্তমানে অনেক আইসিডি মালিককে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বিদ্যমান অবকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (আরওআই) কমে গেছে। নতুন আইসিডিগুলোও প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চার্জ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এবং শিপিং খাতের ায়িত্বশীলরা বলেছেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কঠিন সময় পার করছে।
এখন রপ্তানি আদেশ স্থগিত, বাতিল এবং হ্রাসের ঘটনা ঘটছে।
বিশ্ববাজারে অস্থিরতা এবং অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধি ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এগুলো বিবেচনায় রাখা উচিত। বিকডার বিষয়টি নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে হবে; যাতে আইসিডিগুলো টিকে থাকতে পারে, বাণিজ্যিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৯৩ শতাংশ এবং আমদানিকৃত কনটেইনারের ২০ শতাংশ হ্যান্ডলিং করে
দেশের ১৯টি বেসরকারি আইসিডি। এছাড়া চট্টগ্রাম ব›রের ধারণক্ষমতার তুলনায় ১২ গুণ বেশি খালি কনটেইনার আইসিডিগুলোয় সংরক্ষিত থাকে।

Discussion about this post