Print Date & Time : 19 November 2025 Wednesday 8:18 pm

ব্যবসার আড়ালে চোরাচালানে জড়ান আগারওয়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক  : সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে ৬৭৮ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান। তিনি জানান, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক হিসাব ও নথি পর্যালোচনা করে অনুসন্ধান শুরু হয়। তাতে স্থানীয় বাজার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল সোনা ও হীরা কেনার প্রমাণ মেলে।

তদন্তে দেখা যায়, ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি এলসির মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সোনা, অলংকার ও লুজ ডায়মন্ড আমদানি করে। তবে একই সময়ে কোনো বৈধ উৎস ছাড়াই স্থানীয় বাজার থেকে ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ ১৪ হাজার টাকার সোনা ও হীরা সংগ্রহ করা হয়।

সিআইডি বলছে, এসব সোনা ও হীরা অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে এবং এর আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অর্থপাচারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

অভিযুক্ত দিলীপ কুমার আগরওয়াল (৫৭) চুয়াডাঙ্গা সদরের বাজার পাড়ার বাসিন্দা। বর্তমানে বনানীতে বসবাস করেন। তিনি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের মালিক এবং দীর্ঘদিন ধরে সোনা–হীরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তার বাবা অমিও কুমার আগরওয়াল জার্মানিতে ছিলেন। দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত হন। ব্যবসায়ী বাবার সন্তান দিলীপ আগরওয়ালা পরে বেছে নেন রত্ন ব্যবসা। পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ তৈরির পর আগরওয়ালা পরিবার হয়ে ওঠে অন্যতম প্রভাবশালী। তিনি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দেশে-বিদেশে সোনা ও হীরা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। দিলীপ আগরওয়ালা ২০০৫ সালে বাংলাদেশে বিরাট রত্ন ব্যবসা গড়ে তোলেন। অভিযোগ, তৎকালীন সরকারে থাকা দল আওয়ামী লিগের অন্যতম ফান্ডদাতা দিলীপ আগরওয়ালের সোনা পাচার শুরু করেন। সিআইডি বলছে, ব্যবসার আড়ালেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে অর্থপাচার ও চোরাচালান কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

গত ১৬ নভেম্বর মামলার অনুমোদনের পর তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। চোরাচালানের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ রূপান্তর, হস্তান্তর ও ব্যবহারের সব তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন, রাষ্ট্রের অর্থপাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে এবং আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় সিআইডির অভিযান চলমান থাকবে।

এর আগে গত ১ অক্টোবর জামিনে কারামুক্ত হয়েছিলেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়াল। তবে দিলীপ কুমার আগরওয়ালের কারামুক্তির বিষয়টি জানাজানি হয় ১৬ অক্টোবর।

গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. তারেক জুবায়ের।

পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি দিলীপ কুমার আগরওয়াল উচ্চ আদালত ও ঢাকার আদালত থেকে জামিন পান। ১ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান।

২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন তাকে আদালতে তোলা হয়। এরপর তাকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই দিন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় নিম্ন ও উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর ১ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

সিআইডি তখন বলেছিল, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুমের মাধ্যমে প্রকৃত ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরাকে ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি দুবাই ও সিঙ্গাপুরে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য রয়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্নভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

দিলীপ কুমার আগারওয়ালা গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা ও সদরের একাংশ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ ীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।