চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা গবেষণা ব্যুরোর উদ্যোগে শুক্রবার রাতে নগরীর ‘ব্যবসার ভবিষ্যৎ: উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন’বিষয়ক দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে পাঁচ বছরেই বাংলাদেশকে সোনার খনিতে রূপান্তর সম্ভব। আমাদের জনবল রয়েছে। তবে দেশে পণ্য তৈরির কাঁচামালের অভাব রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সে অভাব পূরণ করতে পারে। লেবার প্রডাক্টিভিটি, ইউটিলিটি প্রোপরশন, লজিস্টিক এক্সিলেন্স, কস্ট টু ফিন্যান্স, অ্যাকসেস টু ফিন্যান্স এবং অ্যাকসেস টু মার্কেট নিশ্চিত করতে পারলে কাঁচামালের অভাব পূরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এটি ঠিক, ৫ আগস্টের পর বাজারকে সঠিক পথে পরিচালিত করা চ্যালেঞ্জ ছিল। তথাকথিত সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখা ছিল খুবই জটিল। সরকারের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল রাখা গেছে। শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৬০০ কোটি ডলার দায় পরিশোধ করা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে অতিরঞ্জন নেই, আশাবাদ আছে। আশাবাদী আমরাও। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য নিশ্চয়ই বিশেষ গুরুত্ব রাখে। তাই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়।
ব্যবসার পরিবেশ সূচকে আমাদের অবস্থান সুবিধার নয়। মনে রাখতে হবে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ সুন্দর থাকলেই ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা অনেক প্রতিকূল অবস্থার শিকার হন। নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসপ্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, কর পরিশোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সময় আগের চেয়ে কম লাগলেও তা প্রত্যাশিত মানে আসেনি। ব্যবসার বাণিজ্যিক বিরোধ মেটাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উদ্যোক্তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। তারা সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেন না, জাহাজীকরণ করতে পারেন না। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। ঋণ পাওয়ার সূচকে অগ্রগতি হলেও ব্যবসা সহজীকরণে আগে পরিকল্পিতভাবে কাজ হয়নি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূচকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যাগুলো শনাক্ত করা হলেও তা ব্যবসায়ীদের সমাধান করতে হয়। নীতিনির্ধারকরা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে থাকেন। আমরা সেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধান করতে পারিনি। মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান করলেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে বিদেশীদের আগ্রহী করা যাবে। অন্যথায় অন্য দেশে চলে যাবেন তারা। সব দেশই এখন বিনিয়োগের জন্য উš§ুক্ত। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরাও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, দুর্নীতি, অনৈতিক লেনদেন, পরিবহন খরচসহ যেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।

Discussion about this post