নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে অনলাইন লেনদেনের সুবিধার্থে ২০১৬ সালের মার্চে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছিল। তবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির এই যুগেও অ্যাপটির ব্যবহার উল্টো পথে হাঁটছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা, যা বাজারের একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএসই মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৬৭ জনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ হাজার ৮৩৩ জন বা প্রায় ২১ শতাংশ কম। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার ৯৪৯ জন। এরপর থেকেই ব্যবহারকারীর সংখ্যায় কমতির ধারা শুরু হয়।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ৭৫৪ জন। পরের বছর কিছুটা বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ৮৯৫ জনে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও কিছুটা বেড়ে অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৭ হাজার ৯৪৯ জনে। তবে এরপর ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৩২৭ জন কমে দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৬২২ জনে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরও কমে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৯০০ জনে।
শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, ডিএসই মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের এই পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:
দীর্ঘমেয়াদি বাজার মন্দা ও মুনাফার অভাব
বাজারে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের সংশোধন ও মন্দা চলায় অনেক বিনিয়োগকারী লাভ করতে পারছেন না। এর ফলে তাদের মধ্যে অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেন করার আগ্রহ কমে গেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের সংশোধন চলছে। অনেকেই বিনিয়োগ করে লাভ করতে না পারায় অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন।
অ্যাপের বার্ষিক ফি চালু
শুরুর দিকে ডিএসই মোবাইল অ্যাপটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যেত। তবে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য বার্ষিক ১ হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পুরোনো ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও এই ফি কার্যকর হয়। শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, “সেকেন্ডারি ও প্রাইমারি উভয় মার্কেটেই লাভের সুযোগ না থাকায় অনেকে এখন আর চার্জ দিয়ে অ্যাপ ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন না।”
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর নিজস্ব অ্যাপ চালু
ডিএসই মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের নিজস্ব ট্রেডিং অ্যাপ চালু করা। বিনিয়োগকারীরা এসব অ্যাপ ব্যবহার করে বিনামূল্যে লেনদেন করতে পারছেন, ফলে ডিএসইর অ্যাপের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে গেছে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, সিটি ব্রোকারেজ, ব্র্যাক ইপিএল, শান্তা সিকিউরিটিজ, শেলটেক ব্রোকারেজ ও রয়্যাল ক্যাপিটাল—এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ফলে ডিএসই অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া বাজারের ডিজিটাল লেনদেন বিস্তারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে অনলাইন ট্রেডিংয়ের গতি থমকে যেতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ ধরে রাখতে ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডিএসইকে অবিলম্বে কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

Discussion about this post