ঢালাওভাবে কর্মচারীদের আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বোনাস দেওয়ার ভিত্তি আর পরিচালন মুনাফা হবে না, হবে নিট মুনাফা। শুধু তা-ই নয়, মুনাফা অর্জনের পর প্রথমে সরকারকে লভ্যাংশ দিতে হবে। লভ্যাংশ না দিলে উৎসাহ বোনাস পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও সরকারের কাছে তা দাবি করতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে তাদের কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস দেয়ার বিষয়ে মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য এসব শর্ত যুক্ত করে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্দেশিকাটির খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোয় উৎসাহ বোনাস দেয়ার ক্ষেত্রে এত দিন যে বিশৃঙ্খলা ও অস্বচ্ছতা বিরাজ করছিল, তা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এখন একটা অভিন্ন উৎসাহ বোনাস নির্দেশিকা তৈরির কাজ চলছে। আমরা এটিতে স্বাগত জানাই।
নির্দেশিকার খসড়ায় বলা হয়েছে, নিট মুনাফা হলেই বোনাস দেয়া যাবে। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণ ও অগ্রিমের ওপর প্রভিশন, বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন এবং অন্যান্য সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন সমন্বয় করে অর্থাৎ বাদ দিয়ে নিট মুনাফার হিসাব করতে হবে। নির্দেশিকার বাইরে বোনাস দিতে গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন লাগবে।
আমরা মনে করি, এত দিন এ বিষয়ে যে নীতিমালা ছিল, যা লঙ্ঘন করে আসছিল কতিপয় বড় ব্যাংক। যেমন তিনটি উৎসাহ বোনাসের বেশি পাওয়ার সুযোগ না থাকলেও ২০২৩ সালে পাঁচটি উৎসাহ বোনাস দেয় সোনালী ব্যাংক।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকটি আমানত-মূলধনে যেমন শীর্ষে আছে, তেমনি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতেও। সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর এহেন কর্মকাণ্ডে ব্যাংক খাত ক্রমেই সাধারণ গ্রাহকের আস্থা হারাচ্ছিল। স্বেচ্ছাচারিতার বড় দৃষ্টান্ত হলো, প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশানাকে অগ্রাহ্যও করে। যেমন- গত ২৭ মার্চ সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে দুটি বোনাসের অর্থ ব্যাংকের কর্মচারীদের কাছ থেকে ফেরত আনার নির্দেশ দেয়। সোনালী ব্যাংক সূত্রেই জানা গেছে, ওই টাকা ফেরত দেননি কেউই। এটি সুশাসন ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার দৃষ্টান্ত নয়।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল— এই ছয় ব্যাংক উৎসাহ বোনাস দেবে পাঁচটি উপাদান বা কর্মসম্পাদন পরিমাপকের ভিত্তিতে। এগুলো হচ্ছে চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার, আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির হার, ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধির হার, খেলাপি ঋণ আদায়ের হার এবং অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার। ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয়, যথানিয়মে কর্মসম্পাদন নিশ্চিত করা যায়নি। অথচ কর্মীদের ঠিকই বোনাস দেয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। আর কিছু নয় খেলাপি ঋণ আদায়ের হার এবং অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার দেখে যে কেউ বুঝতে পারে সুশাসন কোন পর্যায়ে। ব্যাংকে কেলেঙ্কারি নেই, অর্থ পাচার নেই; গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না— এমনই প্রত্যাশা। সে ক্ষেত্রে ব্যাংককর্মীদের বোনাস নিয়েও প্রশ্ন উঠবে না।

Discussion about this post