‘প্রিমিয়ার ব্যাংকে ডা. ইকবালের তুঘলকি কাণ্ড: পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলেন ব্যাংকটিকে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠক বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। এটি তিন পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষাংশ। এ প্রতিবেদনের মূল আলোচ্য ছিল ইকবাল পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবার বড় খদ্দের হয়ে ওঠে প্রিমিয়ার ব্যাংক; বুখারা রেস্টুরেন্টের খাবার ও রেনেসাঁ হোটেলে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের উচ্চ ব্যয় প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাঁধে; নিজের ভবন ভাড়া দেন ব্যাংকের কাছে। আয়কর নথিতে থাকত না প্রকৃত আয়ের তথ্য এবং ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে কর্মীদের ধরে এনে আটকে রাখতেন ইকবাল। অভিযোগ উঠত মারধরেরও।
প্রতিবেদন পড়ে প্রতীয়মান হয়, দায় এড়াতে পারে না বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘ সময় একই ব্যাংকের পরিচালক বা চেয়ারম্যান পদে থাকলে স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হতে পারে, সেজন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালক পদে বহাল থাকার মেয়াদ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে কোনো কিছুতেই দমেননি ডা. ইকবাল। টানা পাঁচ বছর ব্যাংকের চেয়ারম্যান থেকেছেন। এতে ব্যাংকটিতে তার একক আধিপত্য গড়ে ওঠে। তার ইচ্ছা অনুযায়ী চলে ব্যাংকটি। আর ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারের ভূমিকায় ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ব্যাংক খাতের বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির সব ঘটনাই সংঘটিত হয়েছে বিগত দেড় দশকে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিষয় ছিল ওপেন সিক্রেট। এমন কোনো ব্যাংক নেই যেখানে চার-পাঁচশ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেনি। এর বাইরে অনিয়ম তো আছেই। ব্যাংক দখলে সেনা গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। শীর্ষ ব্যাংকারকে তুলে এনে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। কভিডকালে যাতে ব্যাংকারদের চাকরিচ্যুত না করা হয়, সেজন্য কঠোর আইন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অথচ তাদের সহায়তা, নিষ্ক্রিয়তা এমনকি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনিয়ম।
উদ্যোক্তা হোন, আর ব্যাংকার হোন—শূন্যসহশীলতায় অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। শুদ্ধাচার নিয়ে খ্যাতিমান কবি ছড়াকার দিয়ে সম্মানীর বিনিময়ে ছড়া লিখে নিয়েছেন এবং ওই ছড়াগুলোর সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন সাবেক এক গভর্নর। ওই ছড়াগুলো বিভিন্ন ব্যাংক নিজেদের প্রকাশনায় ব্যবহার করে। এ ধরনের একটি ছড়া আখতার হুসেন রচিত—‘অন্যায় করে পার পেতে পার/ জানবে না কেউ কিছু/ কিন্তু তোমার বিবেক আছে/ ছাড়বে না সে পিছু।’ আমাদের বিবেক কি জেগেছে! পরবর্তী সময়ে আমাদের ওই গভর্নরই রিজার্ভ চুরির বিষয়ে জাতিকে অন্ধকারে রেখেছেন।
ব্যাংক খাতে নৈতিকতা ও নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনোটিকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। একটির কমতি থাকলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গ্রাহকের আস্থা হারাবে ব্যাংক। যেসব অনিয়ম-সীমাবদ্ধতায় ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে, সেগুলো দূরীকরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিবিড় তদারকি জোরদার করতে হবে।

Discussion about this post