শেয়ার বিজ ডেস্ক : ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, বলসোনারোর বিচারের দায়িত্বে থাকা ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেকজান্দার দে মোরেসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপকে ব্রাজিলের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ব্রাজিল সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমনপীড়ন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি, সেন্সরশিপ এবং জাইর বলসোনারো ও তার হাজার হাজার সমর্থকের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। এগুলো ব্রাজিলে আইনের শাসনকে দুর্বল করেছে।
ঘোষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রাজিলের অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমী নীতি ও পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো, মার্কিন নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার এবং মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতির ক্ষতি করছে। তবে নতুন আরোপ করা শুল্ক কবে থেকে কার্যকর হবে, তা হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় জানানো হয়নি। তবে এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, আজ থেকে শুল্ক কার্যকর হবে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই বিভিন্ন দেশকে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। এরপর এপ্রিলে সেই শুল্কের দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করেন তিনি। তবে সেই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানান।
ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের মতো শুল্ক চাপাবে। ৯ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হয়। এর পর থেকেই একে একে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক চাপানো শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত ৯ জুলাই বেশ কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধানকে চিঠি লেখেন ট্রাম্প। বেশিরভাগ চিঠিই কার্যত একই রকম হলেও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে লেখা ট্রাম্পের চিঠিটির দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টতই বেশি ‘ব্যক্তিগত এবং আরও সংঘাতমূলক’।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘অবাধ নির্বাচন ও আমেরিকানদের মৌলিক বাকস্বাধীনতার অধিকারের ওপর ব্রাজিলের চরম আক্রমণের কারণে তিনি ব্রাজিলকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা যেকোনো পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর আরোপ করবেন, যা হবে বিদ্যমান শুল্ক থেকে আলাদা।
ট্রাম্প আরও বলেন, ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ‘আক্রমণ’ চালাচ্ছে এবং বলসোনারোর বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে, তা ‘উইচ হান্ট’ বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। বর্তমান ব্রাজিল সরকারের ‘ভয়ানক অবিচার’ সংশোধনের জন্যই এই শুল্ক জরুরি।
তিনি আরও বলেন, তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়কে ব্রাজিলের ডিজিটাল বাণিজ্যচর্চার বিরুদ্ধে তদন্ত (সেকশন ৩০১) শুরুর নির্দেশ দেবেন। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া, যার আওতায় অতীতে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক বসানো হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষায়, ‘বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলমান বিচার আন্তর্জাতিক লজ্জা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে (বলসোনারোকে) অত্যন্ত সম্মান করি।’
‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’-খ্যাত সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলসোনারো ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এক মেয়াদের জন্য ব্রাজিল শাসন করেন। ট্রাম্পের মতো বলসোনারোও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী লুলার কাছে পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান।
ট্রাম্পের মতো তিনিও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ব্রাজিলে ২০২৩ সালের জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লুলা জয়ী হলেও বলসোনারো তা মেনে নিতে অস্বীকার করায় দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
অভিযোগ রয়েছে, বলসোনারো সেই সহিংসতার পেছনে মদত দিয়ে ভোটের ফলাফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এসব অভিযোগে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়, যা এখনও চলমান রয়েছে। বলসোনারো এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

Discussion about this post