শেয়ার বিজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে কেনাকাটার সবচেয়ে বড় দিন হচ্ছে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’। নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার এই দিনটি তাঁদের জীবনে বিশেষ ক্ষণ হয়ে আসে। এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে মার্কিন ক্রেতারা গত বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি কেনাকাটা করেছেন।
মাস্টারকার্ড স্পেন্ডিং পালসের তথ্যানুসারে, এ বছর মার্কিন ক্রেতারা এই ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে অনলাইনে ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। ২০২৪ সালের তুলনায় যা ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অ্যাডোবি অ্যানালিটিকসের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে তারা।
আদতে এই প্রবৃদ্ধি ভালো মনে হলেও বাস্তবতা সে রকম নয় বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা। দেশটির অর্থনীতিবিষয়ক লেখক রিক নিউম্যান সিএনএনকে বলেন, এ বছর মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৩ শতাংশ। ফলে কেনাকাটা ৪ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধির অর্থ হলো, কার্যত তা বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি। এই প্রবৃদ্ধিকে তেমন একটা উল্লেখযোগ্য বলা যায় না।
আরেকটি বিষয় হলো, কেনাকাটা কারা করছেন, সেটা। ফেডারেল রিজার্ভ মানুষের ব্যক্তিগত পর্যায়ের ব্যয়ের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে, এর নাম হলো বিজ বুক। সেই বিজ বুকের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের নিচের সারির মানুষের কেনাকাটা কমেছে। যদিও ফেড দেখেছে, উচ্চ আয়ের ক্রেতাদের কেনাকাটা বাড়ছেই। বিলাসবহুল পণ্য থেকে ভ্রমণ—সব খাতেই তাদের ব্যয় বেড়ে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা খাতবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্লাউডিয়া লোমবানা বলেন, এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে ভোক্তারা জিনিসপত্র কিনেছেন কম, কিন্তু এসবের গড় দাম এবার বেশি। যাঁদের হাতে অঢেল অর্থ আছে, তাঁরা ইচ্ছেমতো ব্যয় করলেও সীমিত আয়ের মানুষেরা কেবল বাজেট করেছেন, অর্থাৎ হিসাব করে খরচ করেছেন।
এই প্রবণতাকে বলা হয় কে (ইংরেজি কে অক্ষর) আকৃতির অর্থনীতি। এ ধরনের ব্যবস্থায় উচ্চ আয়ের মানুষেরা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ ও বাড়ির উচ্চ মূল্যের বদৌলতে বিপুল পরিমাণে ব্যয় করতে পারেন। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষেরা কেবল কাটছাঁট করেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে তাঁরা শুধু ছাড় খোঁজেন।
নিউম্যান আরও বলেন, অর্থনীতিতে দুটি ভাগ হয়েছে। কারও যদি স্টক বা বাড়ি থাকে এবং তিনি উঁচু সমাজের মানুষ হন, তাঁর কোনো চিন্তা নেই, তাঁর পক্ষে হাত খুলে খরচ করা সম্ভব। কিন্তু এই কে অক্ষরের বা কে আকৃতির অর্থনীতির নিচের সারিতে যাঁদের অবস্থান, নিজেদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ কেবল বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের (এনআরএফ) তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ শতাংশ ভোক্তা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে দাম আরও বাড়বে। ফলে তাঁদের কেনাকাটায় আরও বড় প্রভাব পড়বে।
নিউম্যান বলেন, কেউ পণ্য ধরে ধরে দেখছে না, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে সেটির খরচ ৪ শতাংশ বাড়ছে নাকি ১০ শতাংশ। কিন্তু বিষয়টি মানুষের মাথায় আছে বলে মনে করেন তিনি।
সঠিক দামে সঠিক পণ্য—বর্তমান সময়ের ভোক্তাদের কাছে বিষয়টি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভোক্তা আস্থার সূচক নিম্নগামী, চাকরি বৃদ্ধির হার কমে গেছে। আরেকটি বিষয় হলো, ফেডারেল সরকারের দীর্ঘ অচলাবস্থা (শাটডাউন শেষ হয়েছে)। সে কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি সাময়িক বন্ধ থাকায় তাঁদের খরচ কমাতে হচ্ছে।
বাস্তবতা হলো, পণ্য ও সেবা সাধারণ আমেরিকানদের জন্য ক্রমেই ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এ কারণে ক্রেতারা এখন আরও বাছাই করে খরচ করছেন। কোথায় ভালো দামে পণ্য মিলছে, তা ঘুরে ঘুরে খুঁজছে। গৃহস্থালি পণ্য, পোশাক বা ইলেকট্রনিকস—কোথায় গেলে এসব জিনিস কম দামে পাওয়া যায়, সেই খোঁজ করছেন তাঁরা।
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা অর্থনৈতিক চাপে থাকা সত্ত্বেও এবারের ছুটির মৌসুমে ভোক্তারা কেনাকাটায় উদার হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এনআরএফের পূর্বাভাস, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের খুচরা বিক্রি গত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। সে ক্ষেত্রে তা হবে গত বছরের প্রবৃদ্ধির প্রায় সমান।
এনআরএফ আশা করছে, এ বছর ছুটির মৌসুমে খুচরা বিক্রি রেকর্ড ১ লাখ কোটি ডলারে উঠবে, গত বছর যা ছিল ৯৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে অনলাইনে পোশাক খাতে খরচ বেড়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং দোকানে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। মাস্টারকার্ডের হিসাব অনুযায়ী, ক্রেতারা নতুন পোশাক কিনেছেন ঠিক, কিন্তু ছাড় খুঁজছেন। অ্যাডোবি অ্যানালিটিকস জানায়, থ্যাংক্সগিভিংয়ে (প্রতিবছর নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার) ভোক্তারা অনলাইনে রেকর্ড ৬৪০ কোটি ডলার খরচ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এটি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বড় ছাড়ের কারণে তাঁরা অনলাইনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন।
এদিকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিক্রেতারা ‘এখন কিনুন, পরে পরিশোধ করুন’ কৌশল নিয়েছে। এই বিষয়টি ছুটির মৌসুমেও ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠেছে। অ্যাডোবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ পদ্ধতিতে খরচ হবে ২ হাজার ২০ কোটি ডলার, ২০২৪ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্রেতারা এবার অনেকটাই সতর্ক তা ঠিক, কিন্তু ছুটির আমেজ থেকে তাঁরা একেবারে বঞ্চিত হতে চান না।
আরএল
প্রিন্ট করুন








Discussion about this post