শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারতের ১৪তম উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন। শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে সোমবার তিনি তার দায়িত্ব থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর আগেই তার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খবর: এনডিটিভি।
৭৪ বছর বয়সী ধনখড় চলতি মাসের শুরুতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি উপযুক্ত সময়ে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছায় অবসর নেবেন।
তবে বিরোধী দলগুলো বলছে, তার পদত্যাগের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে, যা প্রকাশ্যে আসেনি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে ধনখড় লিখেছেন, তার পদত্যাগ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আমার জন্য এটি একটি গর্বের বিষয় যে, আমি ভারতের এই রূপান্তরমূলক সময়ে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। আমাদের গণতন্ত্রে এই সময়ে যে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন ঘটেছে, তা প্রত্যক্ষ করা এবং তার অংশ হতে পারা আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি।’
রাজস্থানের কিথানা গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া ধনখড়ের জীবন এক সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। চিত্তৌড়গড়ের সাইনিক স্কুল এবং পরে রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি রাজস্থান হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। রাজনীতিতে তার পথচলা শুরু কংগ্রেস পার্টির হাত ধরে।
পরে অশোক গেহলটের উত্থানের সময় তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং চন্দ্রশেখর সরকারের অধীনে একবার মন্ত্রিত্বও পান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত (ওবিসি) জনগণের অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন, বিশেষ করে রাজস্থানে জাট সম্প্রদায়ের জন্য ওবিসি মর্যাদার দাবি নিয়ে।
২০১৯ সালে তাকে হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, যা তাকে আবারও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ, আইন-শৃঙ্খলা ও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে বিরোধীদের সঙ্গে তার একাধিকবার মতানৈক্য হয়।
একপর্যায়ে তাকে অপসারণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল, যদিও সেটি সফল হয়নি। তিনি সেই উদ্যোগকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘একটি মরিচা ধরা সবজি কাটার ছুরি দিয়ে বাইপাস সার্জারি করার চেষ্টা।’
২০২২ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি বিরোধী প্রার্থী মারগারেট আলভাকে হারিয়ে ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পান, যা ১৯৯২ সালের পর সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধান।
জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক অবসর গ্রহণ ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে একপ্রকার ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই পদে সরকার কাকে মনোনয়ন দেয় এবং বিরোধীরা এ নিয়ে কী অবস্থান নেয়।

Discussion about this post