শেয়ার বিজ ডেস্ক : আঞ্চলিক সম্পর্কের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কমে যাওয়া এবং ভারতের সঙ্গে চলমান দুর্বল সম্পর্ক এশিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটগুলোকে দুর্বল করছে। এটি চীনের জন্য রাস্তা উš§ুক্ত করে দিচ্ছে। একজন বিশিষ্ট জাপানি প্রতিরক্ষা গবেষক এমনটাই মনে করেন। খবর: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গবেষণা সংস্থা জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজের চীন বিভাগের প্রধান মাসায়ুকি মাসুদা বলেন, এই পরিবর্তন ইতোমধ্যে কোয়াডের মতো গুরুত্বপূর্ণ জোটগুলোকে প্রভাবিত করছে এবং টোকিওতে উদ্বেগ তৈরি করছে।
গত বুধবার বেইজিং জিয়াংশান ফোরামের সাইডলাইনে মাসায়ুকি বলেন, ‘(আঞ্চলিক জোট) প্রভাবের অন্যতম বড় উৎস কোয়াড এবং অকুস, বিশেষ করে কোয়াড।’
তার মতে, জাপানি দৃষ্টিকোণ থেকে সদস্য রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কোয়াড হলো অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক হাতিয়ার।
তিনি বলেন, কিন্তু ট্রাম্প (মার্কিন প্রেসিডেন্ট) সেই কাঠামোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে এবং মার্কিন-ভারত অংশীদারত্বের অবনতি হয়েছে। ট্রাম্প নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি এমন একটি উদ্বেগের বিষয়, যা জাপানি দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভাব্য মাত্রায় বিপজ্জনক হতে পারে।
‘চতুর্ভুজ নিরাপত্তা সংলাপ’ বা কোয়াড গঠনে প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০০৭ সালে। চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অধীনে এটি গতি পেতে শুরু করে।
চলতি বছরের শেষের দিকে দিল্লিতে একটি অঘোষিত তারিখে এই জোটের নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এই মাসের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের কয়েক দিন পরেই ট্রাম্প ভারতের বৈঠকে উপস্থিতি বাতিল করেছেন বলে জানা গেছে।
সাংহাই সম্মেলনে মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতার কথা টুইট করেছিলেন। সেখানে আলিঙ্গনের ছবি এবং দু’জনের গাড়িতে চড়ার ছবি ছিলÑএটিকে কেউ কেউ মার্কিন প্রশাসনের প্রতি ভারতীয়দের অসন্তোষ প্রকাশ করে বলে মনে করেন।
এরপর ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বৃহত্তর অনিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটায়, যেখানে ইতোমধ্যে মস্কোর তেল কেনার কারণে দিল্লির ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওয়াশিংটন মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। হোয়াইট হাউসের আরোপিত এই শুল্ক এশিয়ার যে কোনো দেশের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ।
জাপানি প্রতিরক্ষা গবেষক মাসায়ুকি মাসুদা সতর্ক করে বলেন, চীন এই ফাটলকে পুঁজি করার চেষ্টা করতে পারে। তবে চীন-ভারত সম্পর্কের সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন বহুপক্ষীয় ব্লক থেকে শুরু করে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্বপূর্ণ জোটের রাষ্ট্রগুলোকে চাপের মধ্যে রেখেছে। অংশীদারদের জোটের জন্য সামরিক ব্যয় বাড়ানোর জন্য জোর দেয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দেয়া হয়েছে।
তবুও মাসায়ুকি মাসুদা মার্কিন-জাপান অংশীদারত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, তাদের ‘জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং জোট সহযোগিতা’ অন্যান্য কিছু ‘আঞ্চলিক দেশের’ সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
উদাহরণস্বরূপ, ওয়াশিংটন মার্চ মাসে জাপানে একটি নতুন যৌথ কমান্ড সেন্টার খুলেছে এবং এই মাসের শুরুতে সর্বশেষ মধ্যমপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ‘টাইফন’ মোতায়েন করেছে। এই কার্যকলাপগুলো বেইজিং থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
তাইওয়ান সম্পর্কে মাসায়ুকি বলেন, টোকিও বেইজিংয়ের দুটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেÑএর ক্ষমতা এবং এর উদ্দেশ্য। চীনের সামরিক শক্তি ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। চীন বলেছে যে, এটি একটি প্রতিরোধক হতে পারে, কিন্তু তাদের মহান সামরিক শক্তি সর্বদা তাইওয়ানকে ঘিরে রয়েছে। এই পরিস্থিতি সামরিক সংঘাতের বৃদ্ধির এক ধরণের সূত্রপাত হতে পারে।
বেইজিং তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আবার একত্র করতে হবে বলে জোর দিয়ে আসছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ দেশ স্ব-শাসিত দ্বীপটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। যদিও ওয়াশিংটন দ্বীপটির জন্য অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এটি দখলের যে কোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে।
মাসায়ুকি আরও বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পদত্যাগ করছেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন আরও রক্ষণশীল উত্তরসূরি। তাই ভুল হিসাব রোধে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে অব্যাহত যোগাযোগ অপরিহার্য।
তিনি বলেন, মানুষ যাতে নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি উপভোগ করতে পারে, তার জন্য টোকিও ও বেইজিংয়ের মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্কের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তাই আমাদের যা করা উচিত, তা হলো অন্তত সংকট ব্যবস্থাপনা। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে এবং নিরাপত্তা অনুশীলনকারীদের মধ্যে সুস্থ যোগাযোগ ছাড়া… একটি ছোট দুর্ঘটনাও প্রকাশ্য সংঘাতে পরিণত হতে পারে।
জিয়াংশান ফোরাম হলো চীনের বৃহত্তম বার্ষিক প্রতিরক্ষা সম্মেলন। এই বছর জাপানি সামরিক প্রতিনিধিরা লক্ষণীয়ভাবে এখানে অনুপস্থিত ছিলেন। ৮০ বছর আগে চীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং জাপানের বিরুদ্ধে বিজয় উদ্যাপনের সময় এই ফোরামটি শুরু হয়েছিল।

Discussion about this post