Print Date & Time : 16 July 2025 Wednesday 5:56 pm

ভারত-বাংলাদেশের যাত্রী পারাপার কমেছে ১১ লাখ

প্রতিনিধি, বেনাপোল
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার কমেছে ১০ লাখ ৬০ হাজার জন।
এই ব›র ব্যবহার করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৬ লাখ ৬ হাজার ৪১০ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছেন ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। এ সময় সরকারের ভ্রমণ খাত থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পথ ব্যবহার করে যাত্রী যাতায়াত করেছিলেন ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৮ জন। সে সময় সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র এক বছরে যাত্রীসংখ্যা কমেছে ১০ লাখের বেশি এবং রাজস্ব আয় কমেছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

সরেজমিনে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও শূন্যরেখায় খো গেছে, বন্দরের কোথাও তেমন কোলাহল নেই। যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার চিরচেনা দৃশ্য নেই। ইমিগ্রেশনে অধিকাংশ কাউন্টারের কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কুলি-শ্রমিকদের তেমন ব্যস্ততা নেই। এক ধরনের সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। মাঝেমধ্যে কয়েকজন যাত্রীর আসা-যাওয়া চোখে পড়ে এসময়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিসা জটিলতা, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য ও নিরাপত্তার অভাবÑসব মিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ায় যাতায়াতও কমেছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের ৫ আগস্টে ভারতীয় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরে জন্য ভিসা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এখনও স্বাভাবিক হয়নি ভিসা প্রক্রিয়া।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ভারতীয়রা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে স্বাভাবিক নিয়মে ভিসা পেলেও আমাদের ভারতীয় দূতাবাস ভিসা দিচ্ছে না। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হ”েছ বাংলাদেশিরা। ব্যবসা, চিকিৎসা ও উ”চশিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভিসা না পেয়ে অনেকে ক্ষতির মুখে পড়ছে।

এদিকে যাত্রীরে অভিযোগ, দেশের সর্ববৃহৎ এই বন্দরে নেই কোনো যাত্রীছাউনি। এ ছাড়া পানির ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। প্রতারকচক্রের দৌরাত্ম্যে ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার হয়েছন অনেকেই।

বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী রতন বলেন, যাত্রীসেবা বাড়াতে ব›রে যাত্রীছাউনির জন্য জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ভারত অংশে ইমিগ্রেশনকেও সেবা বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাত্রী নিরাপত্তার প্রতি সজাগ থাকতে সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পাসপোর্টধারী যাত্রী বিশ্বজিৎ কুমার বলেন, ভ্রমণকর বাড়লেও সেবার কোনো উন্নয়ন হয়নি। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ইমিগ্রেশন পয়েন্টে। আরেক যাত্রী সোহাগ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা েেক বেনাপোল আসা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। এখন মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। কিš‘ বন্দর সকাল সাড়ে ৬টার আগে না খোলায় দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি ইলিয়াস হোসেন মুন্সী বলেন, গত বছর জুলাই মাসের পর থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশে ভ্রমণ ভিসা দেয়া বন্ধ ঘোষণা করে। আগস্টের আগ পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করত। বর্তমানে ভিসা জটিলতার কারণে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমেছে। সর্বশেষ ১৩ জুলাই ভারতে গেছেন মাত্র ৯৮২ জন, ফিরেছেন ৭২৭ জন। এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ছিলেন ৩১৯ জন।