ভূমিকম্প বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগের কাছে মানুষ অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্পের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। ঘূণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের বিষয়ে পূর্বাভাস দেয়া যায়। নদীভাঙনের ক্ষতি কমিয়ে আনতে কিছু ব্যবস্থা নেয়া যায়। গতকাল দেশে যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তাতে মানুষ ভীতিকর পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। রাজধানীর ভবন নির্মাণে যে ধরনের নৈরাজ্য চলছে, তা নগরবাসীর জন্য হতাশার। সাধারণ মানুষের ধারণা এমন দুর্যোগ হলে মুহূর্তে রাজধানীর অনেক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে। সন্দেহ নেই গতকালও ভূমিকম্পের পর প্রথমেই এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে।
ভূমিকম্প-সহনীয় ও নিরাপদ বাসস্থান নির্মাণ এখন আর শুধু প্রকৌশলগত বিষয় নয়, এটি আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপরিহার্য। দীর্ঘদিন এমন কথা বলে আসছেন আমাদের পুরকৌশল বিশেষজ্ঞরা। তাই মজবুত ও নিরাপদ ভবন বানাতে সঠিক পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
বাস করার কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ভবন বানালে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। মজবুত ও নিরাপদ ভবন বানাতে সঠিক পরিকল্পনার বিকল্প নেই। ইমারত নির্মাণ নীতিমালা তো মানতেই হবে, সেইসঙ্গে ভবনটি যথাযথ নিরাপদ ও মজবুত হচ্ছে কি না, সেজন্য নির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হবে।
আমরা জানি, দুর্বলভাবে তৈরি ভবনের কারণেই ভূমিকম্পে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে বন্যা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। গত শতাব্দীতে এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল যে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে তাও ৫.৫ মাত্রার আশপাশে। দেড় দশক আগে হাইতি ও চিলির ভূমিকম্পের তুলনা করলে ভূমিকম্পের ঘটনায় কাঠামোগত ব্যর্থতার কারণে মানবিক ক্ষতি বেশি হতে দেখা যায়। হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল, যার প্রধান কারণ ছিল দুর্বলভাবে নির্মিত ভবন। একই সময় চিলিতে আঘাত হানে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প, যাতে ২৮০ জন প্রাণ হারান। চিলির ভবনগুলো নির্মাণে শক্তিশালী কৌশল ব্যবহার করা হয়। ২০২৩ সালে তুরস্কে ভূমিকম্পে ভবনধসের মাধ্যমে প্রায় ৫৩ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দুর্বলভাবে ভবন নির্মাণের কারণে সেসব এলাকায় দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু বেশি হয়।
২০১৩ সালে সাভারে ৯ তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের একটি ভয়াবহ ঘটনা। ছয়তলা ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দেয়া হলেও পরে ভবনটি ১০ তলায় সমপ্রসারণ করা হয়। একইভাবে খোদ রাজধানীতেও ইমারত বিধির প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হয়েছে। নতুন আইন অনুসারে আগে যেখানে সর্বোচ্চ পাঁচতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি মিলত, সেখানে এখন ১০-১১ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা যাবে। এখন প্রশ্ন হলো, এ নিয়ম কি আবাস ব্যবসায়ী ও বড়িমালিকরা আদৌ মেনে চলবেন না।
বাংলাদেশে নিরাপদ, শক্তিশালী ও ভূমিকম্প প্রতিরোধী কাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেই প্রত্যাশা।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post