নিজস্ব প্রতিবেদক : ৩০ বছর পর অর্থাৎ ২০৫৫ সালে মাতারবাড়ী-মহেশখালীতে ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী-মহেশখালীকে আমরা চীনের সাংহাই বা সিঙ্গাপুরের বন্দরের মতো উন্নতমানের বন্দর তথা কমার্শিয়াল হাব হিসেবে দেখতে চাই। রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বুধবার আশিক চৌধুরী এ কথা বলেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এমআইডিএ) বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৩৩ হাজার একর আয়তনের জমিতে তিনটি ধাপে (২০২৫ থেকে ২০৩০, ২০৩০ থেকে ২০৪৫ ও ২০৪৫ থেকে ২০৫৫) এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিডা চেয়ারম্যান। এ লক্ষ্যে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মহেশখালী ও মাতারবাড়ী নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানিয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এটাকে টাউনশিপ হিসেবে দেখতে চাই। পৃথিবীর সবচেয়ে সাকসেসফুল ডিপ সি পোর্টসসহ টাউনশিপ সিঙ্গাপুরকে বলা হয় এবং আরেকটা পোর্টের কথা প্রায়ই উঠে আসে সেটা হচ্ছে সাংহাই। মনে করুন আমরা বাংলাদেশের একটা সিঙ্গাপুর করতে চাই বা বাংলাদেশের ভেতরে একটা সাংহাই পোর্ট করতে চাই।’
প্রকল্পের পরিকল্পনা ৩০ বছরের জন্য করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘৩০ বছর পর আমরা এই মহেশখালী মাতারবাড়ী এলাকাটাকে সিঙ্গাপুর বা সাংহাইয়ের মতো করে দেখতে চাই। এটা কোনো নৌযানের শহর না, এটা একটা স্যাটেলাইট শহর না। এটা হবে শহরতলি, চট্টগ্রামের মতো আরেকটা বাড়তি শহর। যেটা সংস্কারকৃত এবং নতুন ধরনের।’
মাতারবাড়ী শহর হলে দেশের জিডিপিতে প্রায় দেড়শ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করেন আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড়শ বিলিয়ন ডলারের মতো আমরা জিডিপিতে কোন কন্ট্রিবিউশন করছি, এই এলাকা থেকে। এটা হবে বাণিজ্যিক হাব।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, প্রায় দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে আশা প্রকাশ করে আশিক চৌধুরী বলেন, চূড়ান্তভাবে প্রায় দেড় লাখ লোকের প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান আমরা আশা করছি। এছাড়া পরোক্ষভাবে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান আমরা আশা করছি।’
চারটি পিলারের ওপর ভিত্তি করে এই প্রকল্প কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেগুলো হলোÑগভীর সমুদ্র বন্দর ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, সুবিধা প্রদান কেন্দ , বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সামুদ্রিক মাছ ধরার কেন্দ্র। এ প্রকল্প ৩টি ধাপে ২০২৫ সাল থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তিনটা পিরিয়ডে এই প্রকল্পকে ২০২৫ সাল থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত সাজাতে পারেন। প্রথম পাঁচ বছরকে আমরা বলছি বিকাশকাল। এ সময়ে ফাউন্ডেশন এর কাজ, সড়ক সংযোগের কাজ করা হবে। এর পরের সময়টা হচ্ছে পরিবেশ উন্নয়নকাল। সেখানে আমরা বন্দর উন্নয়নের কাজগুলো শেষ করব। সঙ্গে সঙ্গে কিছু শিল্প কারখানা দাঁড়িয়ে যাবে। এটা ২০৪৩-৪৪ সাল পর্যন্ত হবে আমরা আশা করছি। চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা শেষ ১০ বছর একটি পর্যটনের কথা চিন্তা করতে পারি।’
উত্তরা ইপিজেড বন্ধ ঘোষণায় আগামীতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা এ ঘটনাকে পুঁজি করে কোনো ধরনের আশঙ্কা তৈরি হবে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগের গতিকে সেøা করে দিতে পারে। অ্যাটলিস্ট আমরা যদি খুব ক্লিয়ারলি বিনিয়োগকারীদের এই কথাটুকু এক্সপ্লেইন করতে না পারি, যে কেন এ ধরনের দুর্ঘটনা হলো এবং এটাকে প্রতিহত করার জন্য ভবিষ্যতে আমরা কী করব? এটা যদি আমরা ঠিকভাবে না বলতে পারি, তাহলে এই প্রবলেমটা থেকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি গত জুন-জুলাই থেকে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এফডিআইয়ের ট্র্যাকটা দেখেন, আপনি দেখবেন এফডিআইতে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরে একটা বড় ডিপ হয়েছিল। তারপর আমরা অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর থেকে সেøালি ইকোনমি রিকভার করা শুরু করলাম, এফডিআই আবার ব্যাক ট্র্যাক করা শুরু করল। এখন আমরা একটা নম্বরে চলে আসছি, যেটা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। আমরা পরিস্থিতি ভালো করার জন্য চেষ্টা করছি। আর ইকোনমি ট্রেন্ডটা ধরে রাখতে হলে দুর্ঘটনাগুলোকে আমাদের খুব ম্যাচিউরলি হ্যান্ডেল করতে হবে। এখন ওখানে স্পেসিফিকলি কী কারণে, কীভাবে হয়েছে, আমি এত ডিটেইল জানি না। তবে এটা খুবই দুঃখজনক।’
শ্রমিক আইন নিয়ে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য কী আইন হবে, সরকারের অবস্থা কী হবে, ব্যবসায়ের জন্য কী আইন হবেÑএই ট্রায়াঙ্গুলার রিলেশনশিপকে আরও কীভাবে ভালো করা যায়, এটা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
শ্রমিকদের আইন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা খুব বেশি কিছু করতে পারিনি। তবে চেষ্টা করব আগামী সপ্তাহ থেকে এটা নিয়ে খুব জোরেশোরে কাজ করার। আর সেটা হচ্ছে, জুডিশিয়াল সাইডে। আগামী সপ্তাহ থেকে প্রধান বিচারপতি এবং তাদের একটা টিমের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করব। যেন আমরা এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি, যার মাধ্যমে একটি ব্যবসাবান্ধব আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।’