ওষুধশিল্পের মালিকদের বাদ দিয়ে সরকার ওষুধের বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের এ নীতি ওষুধশিল্পকে ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পমালিকেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার ওষুধের অনুমোদন দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির কার্যালয়ে শনিবার মতবিনিময় সভায় সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন। ‘ওষুধশিল্প-কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম। মতবিনিময় সভায় শিল্পমালিকরা বলেন, বাংলাদেশ ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের মানুষের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধই এখন দেশে তৈরি হয়। চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ দেড়শর মতো দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সহজে ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি নেই। ওষুধের এই সাফল্যের পেছনে আছে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি।
আমাদের মনে আছে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতির বিরোধিতা ওই সময় শিল্পমালিকরাই করেছেন। এখন তারাই সেটিকে সফল বলছেন। প্রায় এক হাজার ওষুধের অনুমোদন পেলে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলেই প্রতীয়মান। প্রশ্ন ওঠে এখানেই! ওষুধশিল্প আমাদের বড় সম্ভাবনাময় খাত। এটিকে কোনোভাবে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আমারা আশা করি, সরকার তা করছেনও না। এমনিতেই দেশে নিম্ন মানের ওষুধ তৈরির অভিযোগ পুরোনো। ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর দায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়া ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দৃষ্টান্তও আছে। তবু কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিল না নিম্ন মানের ওষুধ তৈরি ও বিপণন। নিম্ন মানের ওষুধ তৈরি করে খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নামে ফয়েল পেপার দিয়ে সুন্দর করে চটকদার মোড়ক দিয়ে ওষুধ বাজারজাত করা হয়। বোঝার কোনো উপায় নেই, এটা আসল না নকল। আটা বা ময়দার সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি এসব নকল ওষুধ প্যাকেজিং করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এগুলো ওষুধ তো নয়ই, সাধারণ খাবার হিসেবেও বিপজ্জনক। তাই
মানসম্মত ওষুধ তৈরিতে সময়োপযোগী আইন থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধ প্রশাসন কীভাবে চলবে, ওষুধের মান কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেসব বিষয়ে ওষুধশিল্পমালিকরা পরামর্শ দিতে পারেন। তার পরামর্শ উপেক্ষা করাও উচিত হবে না। বরং তারা মানহীন ওষুধ বাজারজাত ও বিপণন বন্ধে সহায়তা করতে পারেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরেও ওষুধ নিবন্ধন, নমুনা পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অনৈতিকভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে ওষুধশিল্পমালিকরা উচ্চকিত হতে পারেন। অংশীজনদের সমন্বিত প্রয়াসেই আমাদের দেশ ওষুধশিল্পে মানসম্মত পণ্য তৈরি ও বিপণন নিশ্চিত করা সম্ভব।