শেখ শাফায়াত হোসেন: প্রায় দুদিন নিখোঁজ থাকার পর গত রোববার সকালে নিজেই ঢাকার খিলক্ষেতের বাসায় ফিরে আসেন বলে দাবি করেন জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগের এই উপব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুশফিকুর রহমান।
সরকারি এই ব্যাংক কর্মকর্তা দাবি করছেন, তিনি মানসিক অশান্তি দূর করতে পরিবারের সদস্যদের কিছু না বলে একা একা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। এদেকি তার কোনো খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে স্থানীয় থানায় জিডি করেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার নিখোঁজ সংবাদ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপে পত্রপত্রিকাগুলো।
রোববার সন্ধ্যায় নিজ বাসায় বসে মুশফিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মোবাইল ফোন বাসায় রেখে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করতে পারেনি। তারা ভেবেছিল আমার কোনো বিপদ-আপদ হলো কিনা। এ কারণে তারা তড়িৎগতিতে আমার খোঁজ নেয়া শুরু করে। তবে আমি নিজের ইচ্ছায়ই ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। মোবাইল ফোনও ঘরেই রেখে গিয়েছিলাম। এ কারণে আমারও সবকিছুর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’
‘আমি মেন্টাল রিফ্রেশমেন্টের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। মনটা অনেক সতেজও হয়ে উঠেছিল। বাসায় এসে জানতে পারি পরিবারের লোকজন জিডি (সাধারণ ডায়রি) করেছে। পরে খিলক্ষেত থানায় গিয়ে আমি সবকিছু জানিয়ে এসেছি। তারা আমার কথা শুনে আশ্বস্তও হয়েছে’Ñযোগ করেন মুশফিকুর।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে খিলক্ষেতের পূর্ব নামাপাড়ার বাসা থেকে বের হন জনতা ব্যাংকের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে নামাজের অনেকক্ষণ পরেও বাসায় ফিরে আসেননি তিনি। পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে মুশফিকুর রহমানের কোনো খোঁজ না পেয়ে, সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখতে পারেন তিনি নামাজ পড়তে নিকটস্থ মসজিদেও যাননি। এ পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা খিলক্ষেত থানায় একটি জিডি করেন।
এদিকে মুশফিকুর রহমান দাবি করছেন, তিনি তার বৃদ্ধ মাকে বলেছিলেন যে তিনি ঘুরতে যাবেন। এই বলে তিনি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই বাইরে যান। তিনি বাসা থেকে বের হয়ে সদরঘাট যান।
সেখান থেকে একটি লঞ্চে করে শনিবার পটুয়াখালী খেপুপাড়া পৌঁছান। সেখান থেকে আবার আরেকটি যানবাহনে চড়ে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত দেখতে যান।
মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। রোববার আশুরার ছুটিসহ মোট ৩ দিন ছুটি। আমি ভেবেছিলাম রোববার রাতে ঢাকায় ফিরব। কিন্ত ছুটির কারণে অনেকেই সেখানে বেড়াতে যান। রোববার রাতে ঢাকায় ফেরার বাসের টিকিট ছিল না। এ কারণে আমি শনিবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিই। ভোর ৪টার দিকে গাড়ি আবদুল্লাহপুরগামী বাসটি থেকে নিকটস্থ স্টপেজে নেমে বাসায় চলে আসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরেই আমার ছোট ভাই এসে মাকে বোনের বাসায় মালিবাগে নিয়ে যায়। আমার নিখোঁজের খবর মা জানলে ভয় পাবে বলে তাকে কেউ এ সংবাদটি দেয়নি। আমি একমাত্র তাকেই বলে গিয়েছিলাম ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টি।’
তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও কিছুটা অনুতপ্ত। মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি আগে বুঝতে পারিনি এমন তুলকালাম কাণ্ড হবে। আমার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনে আমার ব্যাংকের এমডি আবার বাসায় পর্যন্ত চলে আসেন আমার পরিবারের লোকজনদের সান্ত্বনা দিতে।’
মুশফিকুর রহমানের স্ত্রী এ সময় বাসায়ই ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে মুশফিকুর এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক।
খিলক্ষেত থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, মুশফিকুর রহমান নিজেই কুয়াকাটায় গিয়েছিলেন। তিনি বাসায় ফিরে আমাদের কাছে এসে সব জানিয়েছেন। তার দেয়া কিছু তথ্য আমরা যাচাই করতে চেষ্টা করেছি। প্রাপ্ত তথ্যগুলো সঠিক ছিল বলেই প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
মুশফিকুর রহমানের ছোট ভাই জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি যে ভাই নিজেই ঘুরতে গিয়েছিলেন। এ কারণে আমরা তড়িঘড়ি করে খোঁজ নেয়া শুরু করি। এখানে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এ জন্য আমরা দুঃখিত।’

Discussion about this post