নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও তার স্ত্রী পারভীন চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবে ৩৬৬ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি আলাদা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এই মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, প্রথম মামলাটি চাঁদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এক কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলের বিষয়টি নিয়ে। তার নামে থাকা ১৬টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ২৫৫ কোটি ২৫ লাখ ১১ হাজার ৭৩১ টাকা জমা এবং ২৫৫ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার ২০৪ টাকা উত্তোলনের তথ্য মিলেছে। এসব লেনদেনে ঘুস ও দুর্নীতির অর্থ রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ হয়েছে বলে দুদক মনে করে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় মায়ার স্ত্রী পারভীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৮ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৬৯ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার নামে ৩৬টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১১১ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৪১১ টাকা জমা এবং ১১১ কোটি ৪৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭১২ টাকা উত্তোলনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা মানি লন্ডারিংয়ের সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক। এ মামলায় স্বামী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকেও আসামি করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪: ২৭(১), দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭: ৫(২) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২: ৪(২) ও ৪(৩) আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক জানায়, দীর্ঘসময় ধরে চলা অস্বাভাবিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ বৃদ্ধির প্রমাণের ভিত্তিতেই মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগির মামলাগুলো দায়ের করা হবে।
গত এপ্রিলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং তার স্ত্রী পারভীন চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দেন আদালত।
অভিযোগ রয়েছে, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আওয়ামী আমলে ঢাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার, অসহনীয় মাত্রায় দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে প্লট, ফ্ল্যাট, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন মায়া। লন্ডনে কয়েকটি ফ্ল্যাটসহ কানাডায় বেগম পাড়ায় তিনটি বাড়ি রয়েছে তার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপে চাঁদপুরের মতলবে শাসন করা এই আওয়ামী লীগ নেতার বর্তমান অবস্থান সম্পকে জানা যাচ্ছে না।
আরও অভিযোগ রয়েছে, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সাধারণ মানুষের জমি দখল থেকে শুরু করে, চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম, এমনকি অপহরণের মতো জঘন্য অপরাধেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তথ্যানুযায়ী জানা যায়, মায়া চৌধুরী ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হন।
সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ চিটাগাং রোডে মায়া চৌধুরীর স্ত্রীর নামে আট বিঘা জায়গার মধ্যে রীনালয় সিএনজি পাম্প হাউস, উত্তরা ১নং সেক্টরে ছয়তলা বাড়ি, গুলশানে হোটেল লেক ভিউ প্লাজার পাশে পাঁচ কাঠা প্লট, উত্তরা নিকুঞ্জে ফাইভ স্টার হোটেল দ্যা ওয়েস্টার্ন মায়া, ভুলতা গাউছিয়া ৩০ বিঘা জমিতে স্টার থাই এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি, গাজীপুরে চৌধুরী গার্মেন্টস, পুরান ঢাকা ভূতের গলিতে আলী ভিলা নামে (ছয়তলা) বাড়ি, গুলশান মরিয়ম টাওয়ারে ফ্ল্যাট, উত্তরা ১৪ ও ১৫ সেক্টরে তিনটি বাড়ি এবং মতলব উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে প্রায় ৩০০ একর জমি।
সূত্রে জানা যায়, লন্ডনে কয়েকটি ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে। এগুলো দেখাশোনা করেন তার নাতি আসফাক চৌধুরী মাহি, কানাডায় বেগম পাড়ায় বসবাস করেন তার কন্যা ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ মার্ডারের মূল হোতা তৎকালীন র্যাব-১১-এর কমান্ডিং অফিসার তারেক সাঈদের স্ত্রী রিয়া চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে মায়ার ছোট ছেলে রনি চৌধুরী।
প্রিন্ট করুন








Discussion about this post