নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্কসহ বাণিজ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) ব্রেন্ডেন লিঞ্চ এর নেতৃত্বে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল তিন দিনের সফরে আজ ঢাকায় পৌঁছাবে।
চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষে ওয়াশিংটনে শুল্কবিষয়ক সমঝোতায় ব্রেন্ডেন লিঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেই সমঝোতার পর ইউএসটিআর দপ্তরের কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এ সফরে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক বাধা হ্রাস, ডিজিটাল বাণিজ্যের সম্ভাবনা, মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়ন, শ্রমিক সুরক্ষা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকারের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
বিভিন্ন সূত্র জানা যায়, তিন দফা আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্কহার চূড়ান্ত হয়েছে। তবে চুক্তির খসড়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি; কিছু বিষয়ে সমঝোতা বাকি আছে। ব্রেন্ডেন লিঞ্চের এ সফরে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আয়োজিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন ২০২৫-এর উদ্বোধনীতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ট্যারিফ কাঠামো কীভাবে দেয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।
এর আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনার বিষয়ে এখনও দর কষাকষি চলছে।
আজই মার্কিন প্রতিনিধিদল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ও বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া তারা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সফরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে শুল্ক কাঠামোর ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শুধু পোশাক খাত নয়, ডিজিটাল বাণিজ্য, শ্রমিক কল্যাণ এবং মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিবেশ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা প্রথমে তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়। পরে জুলাইয়ে তা ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে। এর ওপর নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক যোগ হওয়ায় মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ। তবে আলোচনার ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে ২০ শতাংশ শুল্কহার পেয়েছে, যা প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার সমপর্যায়ের। ফলে বৈশ্বিক পোশাকবাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সামগ্রিকভাবে অক্ষুণ্ন রয়েছে।

Discussion about this post