Print Date & Time : 1 August 2025 Friday 6:43 pm

মার্কিন বিমান কেনার উদ্যোগে পাল্টা শুল্কের বরফ গলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফা বাণিজ্য সংলাপের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানো হবে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের থেকে ২৫টি বিমান কেনায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে পাল্টা শুল্ক কমতে পারে বলে আগেই ধারণা করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভারতের আহমেদাবাদে বোয়িং বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় এই কোম্পানির শেয়ারের বড় দরপতন ঘটে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্য বাড়াতে দেশটি থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানির উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
এর মধ্যেই শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠক। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গত মঙ্গলবার মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানো হবে। আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে। তবে নির্দিষ্ট হার এখনও বলা সম্ভব নয়। আজ এবং আগামীকাল আমাদের আরও বৈঠক রয়েছে। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে।’
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সময় তা হয় রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। এ বৈঠকের ওপর দেশের রপ্তানি খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এই পাল্টা শুল্ক কমানোও অন্তবর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। পরে ৯ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ৮ জুলাই বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর। নতুন এ শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক পড়ে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, সেই শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে তা ৩৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে দেশের তৈরি পোশাক খাতে পাল্টা শুল্কের বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এসব কারণে বাংলাদেশ এ শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই কাগজের ভিত্তিতেই ওয়াশিংটনে তিন দিনের এই আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা দেশটিতে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়াবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি প্যাকেজ প্রস্তাব দেয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম। ভিয়েতনামের ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির এই ব্যবধান তুলে ধরেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুকূল সিদ্ধান্ত চায়। এ ছাড়া আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আরও পণ্য আমদানি করবে বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑমার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনা, ৫ বছরে প্রতি বছর ৭ লাখ টন করে গম আমদানির সমঝোতা স্মারক, সয়াবিন, এলএনজি, তুলা, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ।
এ ছাড়া ইউএসটিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। যেমন ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ১৯ শতাংশ, জাপান ও ইইউয়ের ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের জন্য এ হার কত হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’
তৃতীয় দফা এই আলোচনা আজ শেষ হবে। আলোচনা সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা দূর হবে। পোশাক খাতের রপ্তানি নিয়ে তৈরি হওয়া শঙ্কা দূর হবে।