শেয়ার বিজ ডেস্ক : বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্কের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বন্দ্বের কথা অনেকের জানা। এর প্রভাব পড়েছে ওয়াল স্ট্রিটে। বিশেষত ইভি জায়ান্ট টেসলার শেয়ার যেন গভীর সমুদ্রে ডুব দিচ্ছে। গত জুন মাসে মাস্কের গাড়ির কোম্পানির শেয়ারে ১৪ শতাংশ পতন দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে একই নামে আরেক ধরনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ‘বাংলার টেসলা’ নামে বেশ পরিচিত। দেশের অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ অটোরিকশা। ব্যাটারিচালিত এসব রিকশার বাজারও এখন খুব রমরমা। খবর দ্য ইকোনমিস্ট।
বহুদিন ধরেই বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ ছিল সাইকেলচালিত রিকশা। জাতিসংঘ এসব রঙিন রিকশাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে ধীরে ধীরে কিছু চালক তাদের রিকশায় চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক মোটর ও সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি বসাতে শুরু করেন। বর্তমানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে নতুন এই ই-রিকশাগুলো তৈরি ও বিক্রি করছে।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল তো বটেই, শহুরে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও এই ‘বাংলার টেসলার’ ব্যাপক আধিক্য। ব্যাটারিচালিত এই রিকশাগুলো শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই পাল্টে দিয়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে সারাদেশে ‘বাংলার টেসলার’ সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র ২ লাখের মতো। সেখানে ধারণা করা হয়, বর্তমানে আছে প্রায় ৪০ লাখ। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ এসব ‘টেসলায়’ করে চলাচল করছেন। সম্ভবত, বিশ্বের আর কোনো দেশেই এত বড় অনানুষ্ঠানিক বৈদ্যুতিক গাড়ির বহর নেই।
রাজধানীর এক রিকশাচালক বলেন, ‘একজন প্যাডেল রিকশাচালক দিনে কেবল ২০০ টাকা রোজগার করে আর কচ্ছপের মতো চলাফেরা করে। আমি এখন দিনে প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করি আমার টেসলা থেকে।’ কারণ, ই-রিকশা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে পারে, যা প্যাডেলচালিত রিকশার চেয়ে চার গুণ বেশি। তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘এটা বিপজ্জনক। তবে যে কেউ এটা চালাতে পারে।’
তবে বাস্তবতা অনেক সময় ভিন্ন। বেশির ভাগ ই-রিকশাই খুবই দুর্বলভাবে তৈরি, যা বৈদ্যুতিক মোটরের গতির জন্য উপযুক্ত নয়। ফলে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। স্থানীয় একটা এনজিওর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ই-রিকশা সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় ৮৭০ জন মারা গেছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৩৭৮-এ।
ই-রিকশার ব্যবহƒত লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি আরেক বড় সমস্যা। এই ব্যাটারিগুলো মেয়াদ শেষ হলে অবৈধভাবে রিসাইক্লিংয়ের জন্য গলানো হয়। এতে যে ধোঁয়া বের হয়, তা লেড বা সিসা বিষক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে, যা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইউনিসেফের হিসাবে, প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ বাংলাদেশি শিশুর রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসা রয়েছে।
চালকদের সিসাযুক্ত ব্যাটারির বদলে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ (তবে দামি) লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারে উৎসাহিত করলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা উন্নত হতে পারে। এ লক্ষ্যেই কাজ করছে একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। তারা এক ধরনের সাবস্ক্রিপশন সেবা দিচ্ছে, যার মাধ্যমে চালকরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুরোনো ব্যাটারি সরাসরি বদলে নতুন চার্জ করা ব্যাটারি নিতে পারছেন, এতে সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে।
তবে দুর্ঘটনা কমাতে হলে সরকারেরই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অতীতে ই-রিকশা নিষিদ্ধ করতে গেলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গত বছর বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দেশের অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের জুনে খসড়া বিধিমালা তৈরি করে, যাতে গতি সীমা কমানোর পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে এর আগে যেসব বিধিনিষেধ আনা হয়েছিল, সেগুলো দুর্বল বাস্তবায়নের কারণে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে ব্লুমবার্গের তথ্যানুযায়ী, ১৪ শতাংশ শেয়ারের দরপতনের জেরে টেসলার বাজার মূল্য ১৫৩ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের পরপরই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। তবে সেই সময় সেই চর্চা ছিল ইতিবাচক। তবে টেসলার বিনিয়োগকারীরা এতে তিক্ত হয়ে উঠেছিলেন। এই আবহে চলতি বছরের শুরুর দিকে ডিওজিইর সঙ্গে মাস্কের সম্পর্ক তারই গাড়ি কোম্পানির ব্র্যান্ডের ক্ষতি করে এবং শেয়ারের দরপতন হতে থাকে। ট্রাম্প প্রশাসনে ইলন মাস্কের ভূমিকা নিয়ে শেয়ারহোল্ডাররা কয়েক মাস ধরেই সন্দিহান ছিলেন। এরপর এপ্রিলে ইলন মাস্ক টেসলার দিকে আরও মনোনিবেশ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

Discussion about this post