শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারত মহাসাগর অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যের চীনের কিয়াউকপিউ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ভারত-চীন সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। কোকো দ্বীপপুঞ্জে চীনের ত্রি-সেনা ঘাঁটি নির্মাণ এবং ২০২৫ সালের অক্টোবরে ভারতের পরিদর্শন অনুরোধ মিয়ানমার সেনা সরকারের প্রত্যাখ্যান- দু’টি ঘটনাই নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ।
কিয়াউকপিউ বন্দর চালু হলে চীন সরাসরি বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার পাবে। ফলে মালাক্কা প্রণালীর ওপর থেকে দেশটির নির্ভরতা কমবে। বর্তমানে চীনের তেল আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশ মালাক্কা প্রণালী দিয়ে আসে, যা যেকোনো ভূ-রাজনৈতিক সংকটে চীনের জন্য দুর্বলতা তৈরি করতে পারে।
চীন ইতিমধ্যে কিয়াউকপিউ থেকে ইউনান পর্যন্ত তেল ও গ্যাস পাইপলাইন চালু করেছে এবং রেল সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। যা দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে থাকা মিয়ানমারের জন্য চীন বড় বিনিয়োগকারী ও রাজনৈতিক সমর্থক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সামরিক সরকারের সঙ্গে সমান্তরালভাবে সম্পর্ক বজায় রেখে বেইজিং দেশটিতে তার প্রভাব আরও পাকাপোক্ত করছে। বিশ্লেষকদের মতে, কিয়াউকপিউ প্রকল্প ভবিষ্যতে সামরিক ব্যবহারের উপযোগী দ্বৈত উদ্দেশ্যের ঘাঁটিতে রূপ নিতে পারে। যা ভারতের জন্য বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট নীতি’র অংশ হিসেবে মিয়ানমারে যে সংযোগ প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে, বিশেষ করে কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্প, সেখানে ইতিমধ্যে নিরাপত্তা সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বিলম্ব দেখা দিয়েছে। এর বিপরীতে চীনা প্রকল্পগুলোর দ্রুত অগ্রগতি ভারতের উন্নয়ন-প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে ভারতের কৌশলগত প্রভাব প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। পাশাপাশি চীনা নজরদারি বাড়লে ভারতীয় নৌবাহিনীর নড়াচড়া ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনকে প্রতিরোধ করতে ভারতকে কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার সমন্বিত কৌশল নিতে হবে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে রাজনৈতিক, সামরিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদার করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি কালাদান প্রকল্পসহ সংযোগ উদ্যোগ দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গোপসাগরে নৌ-উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে সামুদ্রিক নজরদারি শক্তিশালী করতে হবে। বিমসটেক, আসিয়ান ও জাতিসংঘের মতো মঞ্চে আঞ্চলিক ঐক্য গড়ে তোলাও নয়াদিল্লির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
কিয়াউকপিউ কেবল একটি বন্দর প্রকল্প নয়, এটি ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব বিস্তারের কৌশলগত পদক্ষেপ। মিয়ানমার চীনের অর্থনৈতিক সহায়তায় সুবিধা পেলেও অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি বাড়ছে। ভারতের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ- বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করা।
আরএল
প্রিন্ট করুন








Discussion about this post