শেয়ার বিজ ডেস্ক : চলতি জুলাইয়ের শেষ নাগাদ নতুন মুদ্রানীতি প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান কড়াকড়ি নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশনা অনুসারে নীতিগত সুদের হারে সামান্য সমন্বয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করছেন—আসন্ন নীতিমালা বিনিয়োগবান্ধব হবে এবং ঋণের সুদহার কিছুটা কমার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও অব্যাহত থাকবে।
মুদ্রানীতি হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ পরিচালনা, উন্নয়নকে উৎসাহিত করা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক তার কৌশল সংশোধন করছে।
ব্যবসায়ী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন যে, বিদ্যমান কঠোর নীতি বিনিয়োগ কমাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশা করি আসন্ন মুদ্রানীতি ব্যবসাবান্ধব হবে এবং ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আমরা আরও শিথিল মুদ্রানীতি চাই, বিশেষ করে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়া সুদহার কমানোর আশায়।’
ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে তার সুদহার বাড়িয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করেছিল। তবে এই পদক্ষেপটি মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সাহায্য করলেও এটি বিনিয়োগের গতিকেও বাধাগ্রস্ত করেছে।
এটি স্বীকার করে যে, নীতিনির্ধারকরা এখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নমনীয় করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘যদি আমরা সংকোচনমূলক নীতি অব্যাহত রাখি, তাহলে এটি বিনিয়োগবান্ধব হবে না। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের তিনটি মূল বিষয়ের মধ্যে দুটি অর্জন করেছি। যদিও আমরা মুদ্রাস্ফীতি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, তবে আমরা কিছুটা কমাতে সক্ষম হয়েছি। এই বিবেচনায় এবার আমরা কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতি দেখতে পাব; এটি ততটা সংকোচনমূলক নাও হতে পারে।’
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, মুদ্রাস্ফীতি কেবল মুদ্রানীতি কঠোর করার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি কেবল মুদ্রা সরবরাহের কারণে হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল সুদহার বাড়ালেই বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি কমে না। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য, আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।’
বিশ্লেষকরা একমত যে সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এই ধরনের সংস্কার বাস্তবায়ন এখনও একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বিনিময় হারের চাপ, টাকার অবমূল্যায়ন এবং ঋণের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে, যা বর্তমানে ৮ শতাংশের নিচে।
অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলোর তথ্যমতে, ‘শিল্প উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট ধীরগতির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নমনীয় নীতির দিকে আগাতে পারে।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই মাসের শেষের দিকে ঘোষণা হতে যাওয়া নতুন নীতিমালায় দেখা যাবে যে, মুদ্রাস্ফীতিকে আবারও বাড়তে না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা ঝুঁকিমুক্ত হতে প্রস্তুত।

Discussion about this post