শেয়ার বিজ ডেস্ক : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরে গত আড়াই মাসে ১৭১টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করা হয়েছে। ফলে এর রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
নোঙরকৃত জাহাজগুলোর মধ্যে ১২টি জাহাজ ৮ হাজার ৫১৪টি টিইইউস কনটেইনার বহন করে এবং ছয়টি জাহাজে দুই হাজার ১১৮টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি করা হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ) জানায়, ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বন্দর
দিয়ে মোট ১৮.০২ লাখ টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমন বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এমপিএর উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ মাকরুজ্জামান বলেন, সার, ক্লিংকার, এলপিজি, কয়লা এবং পাথর বহনকারী ১৫৩টি বিদেশি জাহাজ বর্তমানে বন্দর জেটি এবং হারবাড়িয়ার বোয়া, বেস ক্রিক, সুন্দরী কোটা এবং মুরিং বোয়া পয়েন্টের স্থায়ী নোঙরে নোঙর করে আছে।
তিনি বলেন, মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি মূল চালিকাশক্তি, এটি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, বন্দরটি খাদ্যশস্য, সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল, ক্লিংকার, সার, অটোমোবাইল, যন্ত্রপাতি, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তৈলবীজ এবং এলপিজি গ্যাসসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে দেশের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এ ছাড়া মাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, টাইলস, রেশম কাপড় এবং সাধারণ পণ্যও এই বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়।
মাকরুজ্জামান বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্দরে সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বন্দরে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে দেশে গাড়ি আনতে আগ্রহী হওয়ায় মোংলা বন্দর দিয়ে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বেড়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের করা গেলে বন্দরটি বিশ্বজুড়ে একটি পরিবেশবান্ধব এবং ব্যবসাবান্ধব বন্দরে পরিণত হবে।
এদিকে সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সমুদ্রবন্দর মোংলায় কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) বন্দরে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৬ হাজার ৭৬৯ টিইইউস কনটেইনার, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বন্দরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউস। তবে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসার লক্ষ্যমাত্রা ৮০০টি থাকলেও এসেছে ৮৩০টি। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা প্রধান পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছেÑখাদ্যশস্য, সার, গাড়ি, এলপি গ্যাস, সয়াবিন তেল, জ্বালানি তেল, মেশিনারি যন্ত্রপাতি, কাঠ, কয়লা, পাথর ইত্যাদি। রপ্তানির ক্ষেত্রে রয়েছে গার্মেন্টস পণ্য, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, শুকনা মাছ, হিমায়িত খাদ্য ইত্যাদি। বন্দরের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল হক জানান, সুবিধা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বার্ষিক ৪ লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব।