মোবাইল অপারেটরগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পুরোনো। অবস্থা এমন একপর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মোবাইল অপারেটরগুলো। দেশের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতাদের বিরদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। তারা এতই ক্ষমতাবান তাদের বিরদ্ধে অভিযোগ করারই সুযোগ নেই। বারাবার জরিমানা দিয়ে তারা উচ্চ আদালত থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ওপর স্থিতাবস্থার আদেশ নিয়ে রেখেছে। এখন ভুক্তভোগী গ্রাহক অভিযোগ জানালেও নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যবস্থা নিতে পারে না ডিএনসিআরপি।
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া থেকে শুরু করে নানা কৌশলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান। এত বড় মাপের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পরও তারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিটিআরসি বলছে, মোবাইল অপারেটরগুলোর দুর্নীতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, গ্রাহকদের ছাপিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সঙ্গেও এসব প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করছে, যা গুরুতর অপরাধের শামিল। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ‘সালিশে সমাধান চায় জিপি ও রবি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ‘মামলার জটিলতা থেকে মুক্ত হতে অডিট আপত্তির বকেয়া পাওনা নিয়ে সমঝোতা চায় দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) ও রবি আজিয়াটা। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে দুই অপারেটরই সালিসের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি)। বিটিআরসিও এখন সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের কথা ভাবছে। ১০ বছর আগে টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি গ্রামীণফোন ও রবিতে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্রামীণফোন ও রবির কর, ভ্যাট, হ্যান্ডসেট রয়্যালটি, তরঙ্গের মূল্য পরিশোধ, লাইসেন্স ফিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিরীক্ষা হয়। ওই নিরীক্ষার পর গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ও রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা বাবদ দাবি করা হয়।
মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা মানে পিছিয়ে থাকা। ইন্টারনেট সুবিধাসংবলিত ফোন থাকা মানে সারাবিশ্ব হাতের মুঠোয়। এমন মানুষ কমই আছেন যিনি কখনও দেশে বা প্রবাসে অবস্থানকারী স্বজনের সঙ্গে ইমো, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ বা স্কাইপিতে কথা বলেননি; ভিডিও কল করেননি। অনলাইন ব্যবসা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেও মোবাইল ফোন ব্যবহার বাড়ছে। সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (অপারেটর) মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা চলছে। যত তীব্র প্রতিযোগিতা থাকুক রাজস্ব ফাঁকির ক্ষেত্রে তারা সংঘবদ্ধ।
রাজস্ব ফাঁকি প্রশ্নে অপারেটর ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে টানাপোড়েন প্রত্যাশিত নয়। গ্রাহক হয়রানির প্রতিকারের পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিরও সমাধানে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার স্বার্থে একটি ন্যায়সংগত, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী সমাধানে পৌঁছানো দরকার। ‘সবার আগে দেশ ও মানুষ’ তত্ত্ব মেনে অর্থপূর্ণ সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post