মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর : দোতলা জরাজীর্ণ ভবন। ছাদে ফাটল, দেয়ালে লবণ জমে সাদা দাগ। জানালার গ্রিল মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। বৃষ্টির দিনে চুইয়ে পড়ে পানি। এমন ভগ্নদশা ভবনের ভেতরে শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ক্লাস করছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রও এসব স্কুলে। এমনই যশোরের ২৫৯টি ভোটকেন্দ্র এখন অবকাঠামোগত সংকটে ভুগছে। অধিকাংশ কেন্দ্রই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে শিশুরা প্রতিদিন ঝুঁকির মধ্যেই পড়াশোনা করছে।
যশোর শহরের রামকৃষ্ণ আশ্রম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর সদর উপজেলার বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল এ ভয়াবহ বাস্তবতা। অথচ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব বিদ্যালয়ই ব্যবহƒত হবে ভোটকেন্দ হিসেবে।
রামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাতের মা রুমা বেগম বলেন, ‘সন্তানকে ক্লাসে দিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকি। কখন দুর্ঘটনা ঘটে সেই ভয়ে পড়ি।’ একই সুর শিক্ষকদের কণ্ঠেও। সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার জানান, ‘শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে পাঠদান করি আতঙ্কে। প্রতিনিয়ত মাথার ওপর থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্তা শিকারী জানান, ১৯৮৯ সালে নির্মিত এ ভবনটি এখন সম্পূর্ণ জরাজীর্ণ। জানালার গ্রিল ভাঙা, ফ্যান একাধিকবার চুরি হয়েছে। বিকল্প ভবন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান চালাতে হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের খসড়া তালিকা অনুযায়ী যশোর জেলায় মোট ৮২৭টি ভোটকেন্দ থাকবে। এর মধ্যে ২৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে অবকাঠামোগত নানা সংকট। এর মধ্যে ২৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১১টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা।
শুধু ভগ্নদশা ভবনই নয়, এসব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ, ফ্যান, দরজা-জানালা, টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির সংকটও প্রকট। সংস্কারের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, জেলার অন্তত ২৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দে অবকাঠামোগত নানা সংকট রয়েছে। এর মধ্যে অভয়নগরে ৩৯টি, কেশবপুরে ১৩টি, চৌগাছায় ২৮টি, ঝিকরগাছায় ৪৪টি, বাঘারপাড়ায় ৫টি, মনিরামপুরে ৪৯টি, শার্শায় ২৬টি এবং সদরে ৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ১১টি বেসরকারি স্কুল ও মাদরাসা ভোটকেন্দে নানা সংকট রয়েছে।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সংকট চিহ্নিত করে তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর সংস্কার করা হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী হাদিউজ্জামান খান বলেন, ১১টি স্কুল-মাদরাসা ভোটকেন্দে অবকাঠামোগত নানা সংকট রয়েছে। সেগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেবে।
অন্যদিকে, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, খসড়া ভোটকেন্দ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর বড় ধরনের সংস্কার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হবে আর ছোটখাটো সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হবে।
প্রশ্ন উঠেছেÑভবন ঝুঁকিমুক্ত না হলে শিক্ষার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা কে দেবে?

Discussion about this post