শেয়ার বিজ ডেস্ক : জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি কোনো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। এক বছরের মধ্যে উৎপাদন খাতে সবচেয়ে বড় সংকোচনের ফলে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। খবর: বিবিসি।
ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস অফিস (ওএনএস) জানিয়েছে, জুনে অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখালেও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় শূন্যে। তবে মাসভিত্তিক তথ্যপ্রবাহকে অস্থির বলে উল্লেখ করে ওএনএস জানিয়েছে, এখন থেকে তারা তিন মাসের গড় প্রবৃদ্ধির ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে। সেই হিসাবে, জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে অর্থনীতি বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
বাজেটের আগে চাপের মুখে সরকার: আগামী ২৬ নভেম্বর বাজেট ঘোষণার আগে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সরকার ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস কর ও ব্যয় পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নিজস্ব আর্থিক নীতির শর্ত পূরণ করতে তাকে কর বাড়াতে হতে পারে।
ওএনএস জানায়, গত তিন মাসে সেবা খাত শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর পেছনে স্বাস্থ্য খাত, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও অফিস সাপোর্ট সেবার ভালো পারফরম্যান্স কাজ করেছে। তবে উৎপাদন খাতের মন্দা এ প্রবৃদ্ধিকে আংশিকভাবে ক্ষতিপূরণ করেছে। বিশেষ করে জুলাই মাসে উৎপাদন খাত ১ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ের পর সবচেয়ে বড় মাসিক পতন।
ধীর হচ্ছে প্রবৃদ্ধির গতি: চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছিল। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ছিল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু ওএনএস বলছে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে অর্থনীতি ক্রমেই ধীরগতির দিকে যাচ্ছে।
কেপিএমজি ইউকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ায়েল সেলফিন মন্তব্য করেছেন, ‘তৃতীয় প্রান্তিকের দুর্বল সূচনা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে।’ তার মতে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে যে সাময়িক কারণগুলো প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করেছিল, সেগুলো মিলিয়ে যাওয়ায় বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি কমতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শরৎকালীন বাজেটের দেরি হওয়ায় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগ পিছিয়ে যাচ্ছে এবং প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমরা জানি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে আরও কাজ করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি, তবে এটি স্থবির মনে হচ্ছে। বছরের পর বছর কম বিনিয়োগের ফলেই এই অবস্থা। আমরা পরিবর্তনের পরিকল্পনার মাধ্যমে সেটি উল্টে দিতে চাই।’
অন্যদিকে বিরোধীরা সরকারকে কড়া সমালোচনা করেছে। কনজারভেটিভ দলের শ্যাডো চ্যান্সেলর স্যার মেল স্ট্রাইড বলেছেন, ‘যেকোনো প্রবৃদ্ধিই অবশ্যই স্বাগত, কিন্তু এই সরকার দেশের আসল সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে রেখেছে। ধারাবাহিক কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণের খরচ ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে, যা সরকারের প্রতি আস্থাহীনতার প্রমাণ।’
লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের ট্রেজারি মুখপাত্র ডেইজি কুপার এমপি বলেন, ‘সরকার প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার কথা বললেও আসলে তারাই হ্যান্ডব্রেক টেনে রেখেছে। চাকরিভিত্তিক কর প্রবৃদ্ধি ধ্বংস করছে এবং ইউরোপের সঙ্গে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে সরকারের অনিচ্ছা আমাদের রপ্তানিকারকদের পিছিয়ে দিচ্ছে।’

Discussion about this post