নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে গত মাস থেকে কার্যকর হওয়া পাল্টা শুল্ক এই ইতিবাচক প্রবণতায় নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইÑএই সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৪৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৮৯ কোটি ডলার। শুধু জুলাই মাসেই রপ্তানি হয়েছে ৭০ কোটি ডলারের পোশাক, যেখানে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ৯৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়টিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট চার হাজার ৫৮০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।
গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা গত ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়। সংশোধিত এই শুল্কহার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তৈরি পোশাকে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসেছে। ভারতের ক্ষেত্রে হারটি ২৫ শতাংশ, আর ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের জন্য ১৯ শতাংশ। চীনের ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক এখনও ৩০ শতাংশ রয়েছে।
শিল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক রপ্তানিকারক জানিয়েছেন, চীনের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির হারানো অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে চলে আসছে। গত ছয় থেকে আট মাস ধরে এই ধারা স্পষ্ট। তারা আশা করছেন, নতুন শুল্ক কাঠামোর কারণে আগামী মৌসুম থেকে বাংলাদেশে আরও বেশি ক্রয়াদেশ আসবে। তবে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এখন এই শুল্কের কিছু অংশ সরবরাহকারীদের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করছে।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম ৯৪৬ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। চীন রপ্তানি করেছে ৬৯২ কোটি ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ২১ শতাংশ কম। শুধু জুলাই মাসেই চীনের রপ্তানি ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ভারত ৩৩১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হয়েছে ২৬৭ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ক্রেতা পাল্টা শুল্কের একটি অংশ বহনের দাবি জানাচ্ছেন। তারা এমনকি মিসর বা হাইতির মতো কম শুল্কযুক্ত দেশে উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের পরামর্শও দিচ্ছেন। ফলে ভবিষ্যতে নতুন প্রতিযোগিতা ও কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনন্ত গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে গেছে।
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, মার্কিন ক্রেতাদের অনেকে শুল্কের কিছু অংশ সরবরাহকারীদের বহন করতে বলছে। তবে সংগঠনের পক্ষ থেকে সদস্যদের বলা হয়েছে, এই ধরনের প্রস্তাবে সাড়া না দিতে। কারণ সীমিত মুনাফার ব্যবসায় এই অতিরিক্ত বোঝা বহন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, নতুন ক্রয়াদেশের খোঁজখবর আসছে ঠিকই, কিন্তু দাম কম হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান সেগুলো গ্রহণ করতে পারছে না। আশা করা হচ্ছে, আগামী মাস থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। অথচ ২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছিল ৭২৯ কোটি ডলারে, অর্থাৎ ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।

Discussion about this post