নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমানো এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে বিশ্বখ্যাত উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক ইস্যুতে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে একটি উচ্চপর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে।
ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘আমরা বোয়িং কোম্পানিকে ২৫টি উড়োজাহাজের অর্ডার দিয়েছি। এর আগে আমাদের ১৪টি অর্ডার ছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ২৫টি করা হয়েছে। বোয়িং কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী এসব উড়োজাহাজ সরবরাহ করা হবে। এতে এক থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া ইতোমধ্যে ১০০টি করে উড়োজাহাজের অর্ডার দিয়েছে। বাংলাদেশও এবার তাদের কাতারে যুক্ত হলো। এটি আমাদের বিমান খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুদৃঢ় করবে।’
গত ১২ জুন ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহীসহ এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি ছিল
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের। এটি বোয়িংয়ের সবচেয়ে আধুনিক যাত্রীবাহী উড়োজাহাজগুলোর একটি।
দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রি-মার্কেট লেনদেনে বোয়িংয়ের শেয়ারের দামের প্রায় আট শতাংশ পতন হয়েছে।
বোয়িং থেকে উড়োজাহাজ কেনে বাংলাদেশ বিমানও। রাষ্ট্রীয় এ বিমান সংস্থায় বোয়িং থেকে কেনা বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ চলমান রয়েছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বোয়িং একটি বেসরকারি কোম্পানি। এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, বরং বাজারভিত্তিক পরিচালিত। আমাদের অর্ডার সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক আলোচনার ভিত্তিতে হয়েছে।
শুল্ক আলোচনায় তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন যাচ্ছে প্রতিনিধিদল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং শুল্ক আরোপ-সংক্রান্ত ইস্যুতে সমাধান খুঁজতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় ও চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২৯ ও ৩০ জুলাই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি খলিলুর রহমান এবং আমি নিজেও ওই বৈঠকে অংশ নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত ২৩ জুলাই ইউএসটিআরের কাছে আমাদের অবস্থানপত্র পাঠিয়েছি। এবার সরাসরি মুখোমুখি আলোচনা হবে। এখানে আমাদের পক্ষ থেকে শুল্ক প্রত্যাহার, রপ্তানি সুবিধা, কৃষিপণ্য আমদানি, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে ছাড় প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হবে।
প্রতিনিধিদলের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে সয়াবিন ও তুলা আমদানির প্রসঙ্গ বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন সচিব। তিনি বলেন, সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু বেসরকারি আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। মূল বৈঠকের সময় তাদের মধ্যেও পৃথক আলোচনার আয়োজন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ’তিন বছর আগে আমরা ১৮০ কোটি ডলারের তুলা আমদানি করতাম, যা বর্তমানে অনেকটা কমেছে। যদি আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া যায়, তাহলে এখানেই প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু কোনো একটি পণ্যে আমদানি-রপ্তানি নয়, বরং একটি সমন্বিত কাঠামোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকে সমানভাবে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও যোগ করেন, এই মুহূর্তে বোয়িং অর্ডার, কৃষিপণ্য বিনিময়, টেক্সটাইল সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মতো বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দে রয়েছে। আশা করছি, এই সফর বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনাকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং দেশ থেকে আমদানি ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল।

Discussion about this post