শেয়ার বিজ ডেস্ক : বাংলাদেশকে অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে শুল্কছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত উচ্চ শুল্কের চাপ কিছুটা প্রশমিত হবে। একই সঙ্গে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় ভারতের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। খবর: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
গত সোমবার ভারত সরকার তুলা আমদানিতে ১১ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। সীমিত সময়ের জন্য কার্যকর এ সিদ্ধান্ত আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হয়েছে টেক্সটাইল। তাই এ খাতে ক্ষতির প্রভাব কিছুটা কমানো এবং মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ তৈরির কৌশল হিসেবেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, গত ৭ আগস্ট শিল্প খাতের প্রতিনিধিরা মার্কিন তুলার ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সহজ করতে সহায়ক হবে বলে তারা মনে করেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশও এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় একই ধরনের শুল্কছাড় দিয়েছে।
ভারতীয় শিল্প খাতের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুল্ক প্রত্যাহারের মূল লক্ষ্য হলো শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া, বিশেষ করে মার্কিন উচ্চ শুল্ক ও তুলার দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে।’
নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানায়, ২০২৫ সালে ভারতের তুলা আমদানির পরিমাণ হবে প্রায় ১২০ কোটি ডলার, যার বেশির ভাগই দীর্ঘ স্ট্যাপল তুলা। নতুন শুল্কছাড়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে।
শিল্প খাতের কর্মকর্তারা জানান, এ সিদ্ধান্ত কৃষকদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে না। কারণ ভারতের তুলা তোলার মৌসুম শুরু হয় অক্টোবর থেকে, আর বাজারে আসে মার্চ নাগাদ। তাই শুল্কছাড় কার্যকর হলেও কৃষকরা প্রভাবিত হবেন না।
রপ্তানিকারকদের মতে, সীমিত সময়ের এ সিদ্ধান্ত মূলত চলমান আমদানি করা চালানকে প্রভাবিত করবে। তবে মেয়াদ বাড়ানো হলে ভারত যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
ভারতের বস্ত্রশিল্প কনফেডারেশন (সিআইটিআই) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে টেক্সটাইল ও পোশাক আমদানি দ্রুত বাড়ছে। ২০২৫ সালের জুনে ভিয়েতনামের রপ্তানি ২৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং বাংলাদেশের রপ্তানি ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের তুলনায় অনেক কম এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে পিছিয়ে।
ভারতের বস্ত্র খাত মূলত তুলানির্ভর। এই খাতের মূল্য শৃঙ্খল সরাসরি প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দেয় এবং দেশের মোট টেক্সটাইল রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশে অবদান রাখে।
ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চড়া শুল্কারোপই এখন সেই লক্ষ্যের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।