শেয়ার বিজ ডেস্ক : রংপুর অঞ্চলে কৃষকদের কাছে লাভজনক হয়ে উঠছে চীনাবাদাম চাষ। রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার কৃষকরা এ বছরের রবি ও সদ্য সমাপ্ত খরিফ-১ মৌসুমে রেকর্ড ২৩ হাজার ১২ টন চীনাবাদাম উৎপাদন করেছে। খবর বাসস।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত চীনাবাদাম পাইকারদের কাছে মানভেদে মণপ্রতি (প্রতি ৪০ কেজি) ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করতে পারছে। চীনাবাদাম চাষে উচ্চ মুনাফা পাওয়ায় আনন্দিত এ অঞ্চলের কৃষকরা।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত রবি মৌসুমে এই অঞ্চলে ৫ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমি থেকে ১২ হাজার ৩৮০ টন চীনাবাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু কৃষকরা শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার ৬৭৯ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম চাষ করেছে এবং গত রবি মৌসুমে ১১ হাজার ৯২৮ টন উৎপাদন করেছে।’
একইভাবে কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর খরিফ-১ মৌসুমে এই অঞ্চলের রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার জন্য ৫ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমি থেকে ১১ হাজার ৪৭০ টন চীনাবাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সদ্য শেষ হওয়া খরিফ-১ মৌসুমে কৃষকরা ৫ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম চাষ করেছে এবং ১১ হাজার ৮৪ টন ফসল উৎপাদিত হয়েছে।’
সাম্প্র্রতিক বছরগুলোতে রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত উচ্চ-ফলনশীল জাতের চীনাবাদাম চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য খাতে চীনাবাদামের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা সাম্প্র্রতিক বছরগুলোতে বাম্পার ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় চাষের মূল জমি এবং বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে চীনাবাদামের চাষের হার বাড়িয়েছে।’
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পিএইচডি ফেলো মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রতি একর জমিতে ২২ থেকে ২৮ মণ চীনাবাদাম উৎপাদন করে কৃষকরা ৮০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে চরের সাধারণ কৃষক এবং সাধারণ মানুষ চীনাবাদাম চাষকে লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচনা করে এর প্রতি ঝুঁকছে। চীনাবাদাম চাষ তাদের জীবিকা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটিয়েছে।’
এছাড়াও খাদ্য ও কৃষিপণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও ভালো দামের কারণে চাষের জমি এবং নদী তীরবর্তী বিশাল বালুকাময় চরাঞ্চলে প্রতি বছর চীনাবাদাম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রংপুর সিটি মার্কেটের চীনাবাদাম ব্যবসায়ী মো. মোখলেছুর রহমান বাসসকে বলেন, ‘গত খরিফ-১ মৌসুমে জাত ও মান ভেদে কৃষকরা প্রতি মণ চীনাবাদাম ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রংপুরের পাঁচটি জেলার গ্রামাঞ্চলের স্থানীয় বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে চীনাবাদাম কিনে আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মণ প্রতি ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করি।’
রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার আনোয়ারুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, ইয়াসিন আলী, সাইদুল ইসলাম, নুরুল হক এবং মোহাম্মদ আলী বলেন, গত রবি ও খরিফ-১ মৌসুমে তারা চীনাবাদামের বাম্পার ফলন পেয়েছেন এবং দামও ভালো ছিল।

Discussion about this post