শেয়ার বিজ ডেস্ক : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। সেই ক্ষমতাবলে গ্রুপটি তখন বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি) বলছে, বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে পণ্য রপ্তানি করে সেই অর্থ দেশে আনেনি বেক্সিমকো গ্রুপ; প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী ১৭টি কোম্পানির নামে সালমান এফ রহমান বিদেশে ৮ কোটি ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৮ মার্কিন ডলার (ডলার প্রতি ১২১ টাকা হিসাবে এক হাজার এক কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৬৮ টাকা) অর্থ পাচার করেছেন বলে তারা প্রমাণ পেয়েছেন। এসব অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় দায়ের করা ১৭টি অর্থ পাচার মামলা তদন্ত করে সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। এসব চার্জশিটে সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জন ব্যক্তি ও ১৭ কোম্পানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চার্জশিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতে মতিঝিল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা (জিআরও) মো. রোকনুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ১৭টি অর্থ পাচার মামলার চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। সেগুলো বিচারের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, ভাই এ এস এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান। এ ছাড়া আসামির তালিকায় থাকা বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারা হলেন—আনোয়ারুল বাশার, নাসরিন আহমেদ, সাজিয়া জামান, খাদিজা বিনতে আলম, হেলাল, শাহিদা রহমান, ওয়াসিউর রহমান, রেজিয়া আক্তার, সৈয়দ ফরিদুজ্জামান, কামরুন নাহার নাসিমা, কাজী উম্মে কুলসুম মৈত্রী, রুম্মান আহমেদ ফাহিম খান, কোহিনুর আবেদিন, মোহাইমিনুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান খান, সৈয়দ তানবীর এলাহি আফেন্দী, মাশরুকা খানম, সাইফুর রহমান, আহমদ জালাল খান মজলিস, ইমরান খান মজলিস, মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার, নুসরাত হায়দার, আবু নাঈম মোহাম্মদ সালেহীন, মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর। কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমান ছাড়া পলাতক বাকি সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে চার্জশিটে।
বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের ১ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার পাচার: বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৭টি এলসির মাধ্যমে ১ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ২৩৬ মার্কিন ডলারের পণ্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করে। কিন্তু নির্ধারিত চার মাসের মধ্যে এ রপ্তানিমূল্য দেশে আসেনি। বিদেশে এ বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে সিআইডির উপপরিদর্শক সাহানূর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে পাচার করা প্রতিষ্ঠান ও সালমানসহ ৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
এ ছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেডের এলসির মাধ্যমে ২৯ লাখ ৯৭ হাজার মার্কিন ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড ২৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯২ মার্কিন ডলার, আরমান ফ্যাশন লিমিটেড এক লাখ ২০ হাজার ৫১৩ মার্কিন ডলার, অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড ২৮ লাখ ৩২ হাজার মার্কিন ডলার, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড দুই কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার, অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড ২৩ লাখ ২৮ হাজার মার্কিন ডলার, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৭৬ মার্কিন ডলার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড ১৯ লাখ ৯৮ হাজার মার্কিন ডলার,
মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড ২৯ লাখ ৩৬ হাজার মার্কিন ডলার, কাঞ্চনপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড ২৯ লাখ ৭৯ হাজার মার্কিন ডলার, কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড ১৯ লাখ ৬৪ হাজার মার্কিন ডলার, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেড ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭৫ মার্কিন ডলার, উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৪ মার্কিন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়ার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড ৪৫ লাখ ৪১ হাজার ২০৩ মার্কিন ডলার, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড ৩৮ লাখ ২২ হাজার ১৮৭ মার্কিন ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের ১৮ লাখ ৬ হাজার ১৪৩ মার্কিন ডলার অর্থ বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের সময় দেশের সম্পদ যারা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে করা অর্থ পাচার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ কাজ করে যাবে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দ্রুততম সময়ে দেশে ফেরাতে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন। এ ছাড়া সালমান এফ রহমানের মতো দেশের অর্থনীতিখেকোদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রিন্ট করুন










Discussion about this post