চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্যবাহী কনটেইনার আসা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ে। গত মাসে লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগও রাজস্ব আদায় হয়নি। এতে একদিকে আইসিডি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় কমছে, অন্যদিকে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। আমদানিকারকদের অতিরিক্ত ডেমারেজ, ডিটেনশন ও হ্যান্ডলিং চার্জ দিতে হচ্ছে। কমলাপুর কাস্টম হাউস আইসিডি ও আমদানিকারকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত মাসে কাস্টম হাউস আইসিডির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭৭ কোটি টাকা। ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ১৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগও আদায় হয়নি। অথচ গত বছরের অক্টোবরে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৬৯ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা, কর্তব্য কাজে অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আইসিডিতে কনটেইনারে আসায় গতি নেই। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনাইরবাহী জাহাজ আসতে সময় লাগে (১০ থেকে ১৫ দিন)। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় কনটেইনার আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। ক্রেতার চাহিদা, সময় নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে সেসব পণ্য বাজারজাত করতে না পারলে অবিক্রীত থেকে যায়। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
পণ্য খাতের ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করায় কনটেইনার পরিবহনে গতি আনা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি পণ্য আমদানি হয় রমজানে। এবারও রেলপথে পণ্য পরিবহন জটিলতায় সংকটে পড়তে পারেন ব্যবসায়ীরা।
মূলত রেলের পণ্য পরিবহন খাতের লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) দিয়ে একের পর এক যাত্রীবাহী সার্ভিস চালু করায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার স্থানান্তরে প্রয়োজনীয় ট্রেন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দিন দিন জট বাড়ছে আইসিডি ডিপোতে।
প্রতিদিনই ডিপোতে জমছে আমদানি পণ্য। দ্রুত ইঞ্জিন বরাদ্দ দিয়ে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক করা না গেলে আসন্ন রমজান ও ঈদে দেশব্যাপী দেখা দিতে পারে ভোগ্যপণ্য সংকট। এমনকি আমদানি করা কাঁচামাল বন্দরে আটকে থাকায় গার্মেন্টসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্য উৎপাদন শেষে সময়মতো শিপমেন্ট নিয়েও শঙ্কিত রপ্তানিকারকরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি হওয়া পণ্যবাহী কনটেইনার, খাদ্যশস্য, জ্বালানি, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য সারা দেশে পরিবহন হয়। কমলাপুর আইসিডি হয়ে অনেক পণ্য আবার রেলপথে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। নিরাপত্তা ও সাশ্রয়ের জন্য সবাই রেলপথে পণ্য পরিবহন করতে চায়, কিন্তু রেলের ইঞ্জিন সংকটের কারণে কনটেইনার পরিবহনে বেশ ধীরগতি বিরাজ করছে। দেশের অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে রেল খাতকে গতিশীল করা দরকার। সাধারণত ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে উৎপাদনের গতি কম থাকে। ওই সময় রপ্তানিমুখী খাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্যে সরবরাহের প্রয়োজন হয়। একসঙ্গে সব সমস্যা সমাধান কঠিনই বটে। তাই এখনই রেলপথে কনটেইনার পরিবহনে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
প্রিন্ট করুন

Discussion about this post