Print Date & Time : 4 September 2025 Thursday 5:32 am

রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণেও উদ্যোগ নিতে হবে

রাজধানীর পল্টনে শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন স্মারক বক্তৃতায় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত ও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বছরে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত রপ্তানি আয় করতে পারে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, মানতেই হবে যে এক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতি তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এ সময়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে (খাদ্যবহির্ভূত ছাড়া), টাকার অবমূল্যায়ন কম হয়েছে ও রিজার্ভ বেড়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজ মিলে কাজ না করলে সংস্কার কোথাও না কোথাও আটকে যাবে।

আমাদের শিল্প খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সুযোগও কম নয়। বৈশ্বিক মহামারি কভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ নেতৃত্ব দেয়া এ খাত তৈরি পোশাক খাত প্রমাণ করেছে, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে সক্ষম। দেশের পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা প্রায়ই বলছেন, সরকারের নীতিসহায়তা পেলে তারা এগিয়ে যাবেন। আমরা মনে করি, তাদের কথায় বাহুল্য কিছু নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো সরকার এ খাতে যত সহায়তা, প্রণোদনা ছাড় পাচ্ছে; অন্য কোনো খাত তা পাচ্ছে না। তাহলে রপ্তানি বহুমুখীকরণ কীভাবে সম্ভব! কোনো একক খাতের ওপর নির্ভরতা দূরদর্শিতার পরিচায়ক নয়।

সুযোগ কাজে লাগিয়ে বছরে প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত রপ্তানি আয় করতে পারে বাংলাদেশ। সে সম্ভাবনা কতটা কাজে লাগিয়েছি আমরা।  আমাদের নতুন নতুন বাজার সন্ধান করতে হবে। পণ্য বহুমুখী করতে হবে। পোশাক ও রেমিট্যান্সের মতো বড় খাতগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব বেশিসংখ্যক দেশে বেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

শুধু সম্ভাবনা নয়, বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। যেমন স্থলবন্দরের সক্ষমতার অভাব ভারতে পোশাক রপ্তানিতে বড় বাধা। স্থলবন্দরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নন-ট্যারিফ বাধাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় রপ্তানিকারকদের। কোনো কারণে পণ্য ফেরত এলে রপ্তানিকারকদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এমন সমস্যার সমাধান জরুরি।

উপদেষ্টা পরিষদ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজ মিলে কাজ না করলে সংস্কার আটকে যাবে; প্রত্যাশিত উন্নয়নও থমকে যাবে। নিশ্চয়ই আমরা এ অবস্থা চাই না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, কর্মপরিবেশ ও মানসংক্রান্ত বিষয় প্রতিপালন করা, রপ্তানিকারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা এবং বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোকে অধিকতর বাণিজ্যবান্ধব করে তোলা গেলে রপ্তানি বাড়ানো কঠিন নয়। এক-দুই মাসে রপ্তানির উল্লম্ফনে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে ধারাবাহিকতা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ভারত ও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য তৈরি হওয়া সুযোগ সদ্ব্যবহার করতে হবে।