প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : রমজান ঘনিয়ে আসতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের খেজুর বাজার। চাহিদা বাড়ায় আমদানিও বেড়েছে কয়েকগুণ, তবে বাজারে দামের স্থিতিশীলতা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছিল ৩ হাজার ১০৯ টন। সেখানে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮৩ টন। এ হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের এই পাঁচ মাসে খেজুর আমদানি বেড়েছে প্রায় ১২১ শতাংশ।
রমজান সামনে রেখে খেজুর আমদানি বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আমদানিকারকরা। তবে দাম নিয়ে তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার রমজানেও খেজুরের দাম বেশি থাকবে। তাদের দাবি, শতভাগ মার্জিন দিয়ে আমদানি করার পাশাপাশি খেজুর আমদানিতে শুল্ক কর বেশি হওয়ায় খরচ আগের মতোই আছে। বরং ক্ষেত্রভেদে খরচ কিছুটা বেড়েছে। তাই এ বছর রমজানেও খেজুরের দাম বেশি থাকবে।
জানতে চাইলে খেজুর আমদানিকারক চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম বলেন, ‘খেজুরের দাম কমার সম্ভাবনা কম। এখনও ব্যবসায়ীদের শতভাগ মার্জিন দিয়ে খেজুর আমদানি করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি রপ্তানিকারক দেশে খেজুরের দাম বেশি। তাই খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে যদি সরকার মার্জিন কমিয়ে দেয়, তা হলে বেশি পরিমাণে খেজুর আমদানি হলে দাম কমবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমদানি অব্যাহত থাকলে আশা করছি রমজানে খেজুরের সংকট হবে না।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেজুরকে বিলাসী পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার। সেইসঙ্গে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ট্যাক্স, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, তিন শতাংশ রেগুলেটরি ট্যাক্স, পাঁচ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্যক্সÑএটি, ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যক্স-এআইটি, মোট ৫৩ শতাংশ নানা কর ধার্য করে সরকার। এরপরই বাজারে বাড়তে শুরু করে খেজুরের দাম। দাম বেড়ে তখন খেজুর বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়, মাবরুম বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়, মরিয়ম বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, জাহিদি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় ও মেডজুল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এরপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানিকারকদের দাবির প্রেক্ষিতে কাস্টমস ট্যাক্স ১০ শতাংশ কমিয়ে ৪৩ শতাংশ শুল্ক বেধে দেয় সরকার। এরপর বাজারে খেজুরের দাম কিছুটা কমতে থাকে। তবে বাজারে এখনও আগের মতোই রয়েছে দাম।
নগরীর ফলমন্ডিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এখন পাইকারিতে আজওয়া প্রতি কার্টন (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। মাবরুম প্রতি কার্টন ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সাকাবি প্রতি কার্টন ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকা। মেডজুল প্রতি কার্টন ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। জাহিদি প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। সুকারি প্রতি কার্টন ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। মরিয়ম প্রতি কার্টন ৪ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে বাজারে খেজুরের দাম আগের মতো বাড়তি থাকলেও গত পাঁচ অর্থবছরের খেজুর আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, করোনা মহামারির পর ২০২২ সালে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সরকার ফলসহ প্রয়োজন একেবারেই কম এমন পণ্য আমদানিতে মার্জিন বাড়িয়ে দেয়ার পর দেশে খেজুর আমদানি কমতে থাকে। এরপর টানা তিন বছর ধারাবাহিকভাবে খেজুর আমদানি কমে যাওয়ার পর এখন আবার আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ১৭০ টন খেজুর আমদানি বেশি হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের এই পাঁচ মাসেও খেজুর আমদানি বাড়ছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে দ্বিগুণ খেজুর আমদানি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে খেজুর আমদানি হয় এক লাখ ৪ হাজার ৪১০ টন। এই খেজুরগুলোর প্রতি কেজির গড় শুল্কায়ন মূল্য ছিল ১ দশমিক ৭৫ ডলার। পরের অর্থবছর আমদানি হয় ৯১ হাজার পাঁচ টন। ওই বছর যে খেজুর আমদানি হয়, সেগুলোর প্রতি কেজির গড় শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৩ দশমিক ২২ ডলার। পরের বছর আরও কমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে খেজুর আমদানি হয় ৮৩ হাজার ১৩৩ টন। খেজুরগুলোর আমদানি মূল্যও ছিল কম। ওই বছর আমদানি করা খেজুরের প্রতি কেজির গড় শুল্কায়ন মূল্য ছিল ১ দশমিক ৮৬ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি আরও কমে যায়।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post