নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্বাভাবিক রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এলসি খোলায় কোনো হস্তক্ষেপ না করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ১০টি খাদ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্রে সংরক্ষিত নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া খেজুরের আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। ফলে এলসি খোলায় কোনো সংকট তৈরি হবে না। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বাজার স্বাভাবিক রাখাও অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধুমাত্র ডলার সরবরাহ বা সুদের হার কামিয়ে নয়, কর পরিকল্পনা ও আমদানি রফতানি সহজ করতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
রমজানকে সামনে রেখে এমনিতেই নিত্যপণ্য আমদানি বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাজার স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি, ছোলা, খেজুর ও ভোজ্য তেলসহ খাদ্যপণ্য আমদানিতে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। আন্তর্জাতিক বাজার দর আর পরিবহনের খরচের ওপর নির্ভর করে প্রতি বছরই আর্থিক আকার হয় প্রায় দ্বিগুণ।
আসন্ন রমজান ঘিরে প্রয়োজনীয় ১০টি খাদ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্রে সংরক্ষিত নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পণ্যগুলো হলোÑ চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর এই ১০টি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নগদ মার্জিন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রমজান মাসে এসব পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাই আমদানি সহজ করার মাধ্যমে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখা ও মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর আগে রমজান মৌসুমে কিছু ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণের নির্দেশনা ছিল। পরে আমদানি পরিস্থিতি ও বাজারের চাহিদা বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সেই হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার সুযোগ দেয়া হয়, যার সর্বশেষ সময় ছিল গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সংশ্লিষ্ট আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে নির্দেশনায় জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে, আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে গত বছরের মতো এবারও খেজুরের আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। রোজায় খেজুরের দাম সহনীয় রাখতে পণ্যটির আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং উৎসে করহার ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। রোজা উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর ও শুল্কায়ন যৌক্তিকীকরণ নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে বাণিজ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে ট্যারিফ কমিশন আরও বলেছে, খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সব ধরনের শুল্কছাড় আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল রাখা যেতে পারে।
শুল্ক কমানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা ও ইটিআইএন, বিআইএন লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা শিথিল করার অনুরোধ জানানো হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে। সংস্থাটি বলেছে, এতে খেজুরের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।
ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলেছে, প্রতিবছর রোজার সময় খেজুরের চাহিদা বাড়ে। এ সময় পণ্যটির সরবরাহ সহজলভ্য করতে খেজুর আমদানিতে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ও আমদানি শুল্ক যৌক্তিক করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে খেজুরের চাহিদা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টন। এর মধ্যে রমজান মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকে। এসব খেজুর মূলত সৌদি আরব, আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, মিসর, জর্ডান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়।
ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব ধরনের খেজুর আমদানিতে সব মিলিয়ে ৫৭ দশমিক ২০ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। এর মধ্যে সিডি ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ১০ শতাংশ ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ। খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পর থেকে প্রায় তিন মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আগামী রোজা শুরু হতে তিন মাসের কম সময় রয়েছে, তাই যত শিগগির সম্ভব এ বিষয়ে এনবিআর ব্যবস্থা নিতে পারে।
এদিকে নির্বাচনের তোড়জোড় যত বাড়ছে, আর্থিকখাতে স্নায়ুচাপ ততই বাড়ছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শিল্প ও পেট্রোলিয়াম
জাতীয় পণ্যের আমদানি বেড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন
খান বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে ব্যবসা বাণিজ্যে একটা চাঙাভাব থাকবে। যখন বেসরকারি খাত বিনিয়োগ শুরু করবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমদানি রপ্তানি বাড়বে, এতে একটা চাপ সৃষ্টি হবে।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post