অরণ্য আজাদ : রাজধানীর শনিরআখড়ার শেখদী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। গভীর রাতেও গ্যাসের দেখা মেলে না। উননে চড়ে না হাঁড়ি। দিনে তিন বেলা খেতে হচ্ছে কেনা খাবার। ভোগান্তি সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধের কারণে মহাসড়কসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বেলা ৩টার দিকে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে আশপাশের আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিরআখড়ার শেখদী এলাকায় আবাসিক বাসা-বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস না থাকায় চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। এরই জেরে গতকাল সোমবার দুপুরে তারা রাস্তায় নেমে আসেন এতে শনিরআখড়া পয়েন্টে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর ১২টা থেকে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় মহাসড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
অবরোধে অংশ নেওয়া ৬২নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা ও ‘জনগণের’ কাউন্সিলর সৈয়দ আহমেদ, বিএনপি নেতা রিপন মিয়া, বটতলা জামে মসজিদের সভাপতি কামাল বাশার, সেক্রেটারি শাহনেওয়াজ চৌধুরী, জামায়াত নেতা মোজাম্মেল হক, বিএনপি নেত্রী সালেহা বেগমসহ অনেকেই অবরোধের কারণ ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেন।
এ সময় তারা বলেন, শনির আখড়ার শেখদী এলাকায় প্রায় চার মাস ধরে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে দিনে-রাতে মাঝেমধ্যে লাইনে একটু-আধটু গ্যাস এলেও বর্তমানে অধিকাংশ বাসা-বাড়িতে একেবারেই গ্যাস আসছে না। অনেকেই বাসার ছাদে, গলিতে লাকড়ি চুলায় আগুন জ্বালিয়ে রান্না করছেন- যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় নেতারা জানান, ইতোপূর্বে তারা গ্যাসের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি-পত্রও দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। তাই বাধ্য হয়ে তারা গতকাল রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের কাছ থেকে জেলা প্রশাসক ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান না হলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, শেখদী এলাকার দীর্ঘদিনের গ্যাস সংকট নিরসনের লক্ষ্যে সেখানকার এলাকাবাসীরা ব্যানার নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। তাতে লেখা ছিল ’গ্যাস চাই, গ্যাস চাই, গ্যাস চাই।’
আরও জানা যায়, এলাকাবাসীর এই অবরোধের প্রভাবে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার অচল হয়ে পড়ে এবং যানজট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। দীর্ঘ সময় যানবাহনে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণযাত্রীদের। এ সময় অনেকেই বিকল্পপথে গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স সড়ক অবরোধে ভোগান্তিতে পড়লে স্থানীয়রা তীব্র যানজটে থাকা গাড়ির পেছনের অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগীদের অন্য রুটে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেও দেখা যায় অবরোধকারীদের। পরবর্তী সময়ে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করলে মহাসড়কে যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে দনিয়া-যাত্রাবাড়ীর গ্যাস অফিস (রায়েরবাগ) অবরোধ করেন এলাকাবাসী। সে সময় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি সাত দিনের সময় চাইলে তারা সেখান থেকে ফিরে এসে শনিরআখড়া পয়েন্টে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।
রাজধানীর মানিকনগরের বাসিন্দা মোবারক হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রায়ই সকালে রান্নার গ্যাস থাকে না। সকাল ৮টার পর অধিকাংশ দিন গ্যাস চলে যায়। এতে আমাদের রান্না-খাওয়ার অনেক অসুবিধা হচ্ছে।’
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় খনিগুলো দৈনিক ১ হাজার ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি থেকে সরবরাহ দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে প্রতিদিন ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে। যদিও এলএনজি থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হয় না। সংগত কারণে বাস্তবে এই ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি।
এ কারণে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি থেকে বের হতে পারছে না পেট্রোবাংলা। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি দেখানো হয়েছে। দেশের প্রধান জ্বালানি গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে ভবিষ্যতে বিদ্যুতায়নে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য এক ধরনের জ্বালানি সরবরাহ ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post