‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে মেরুল বাড্ডার বাসাভাড়া দ্বিগুণ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজ-এ, তাতে রাজধানীর নাগরিক জীবনের নতুন ভোগান্তির তথ্য উঠে এসেছে। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় কী করে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে ওঠার পর পাল্টে গেছে পুরো এলাকার চিত্র। ধনী পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে থাকতে শুরু করায় এলাকাটি দ্রুত সময়ে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বাসাভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। কেবল মেরুল বাড্ডা নয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চালুর পর এর প্রভাব পড়েছে আশপাশের এলাকার ওপরও। যেমন—মধ্য বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, শাহজাদপুর ও সাঁতারকুল এলাকাগুলোর বাসাভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সেখানে আগে থেকে বসবাসরত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তুলনামূলক সস্তা এলাকায় চলে যেতে শুরু করেছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের আশপাশের বাসিন্দারা বলছেন, দেশের অন্যতম শীর্ষ এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা যেমন উন্নতমানের, তেমনি এতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরে বড় অংশই বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বাসস্থানগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন রূপ নিতে শুরু করে। ফলে এ এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করে আসা নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর জন্য অবস্থান করা অসম্ভব হয়ে যায়। যেমন—১২ বছর ধরে মেরুল বাড্ডা এলাকায় বসবাস করা বেসরকারি চাকরিজীবী-শ্রমজীবীরা বাসাভাড়া বেশি বেড়ে যাওয়ায় পরিবারসহ অন্যত্র চলে গেছেন। একজন আগে ভাড়া দিতেন ১৫ হাজার টাকা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থানান্তর হওয়ার পর বাড়িমালিক জানালেন, বাসা ভাড়া ৩০ হাজার টাকা করেছেন। এমন অসংখ্য পরিবার ইতোমধ্যে অন্যত্র চলে গেছে। গত এক বছরে অন্তত ৩৫ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার মেরুল বাড্ডা ত্যাগ করেছে—স্থানীয় এক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট জানায়।
রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে বছর আগে সরকার পোশাক ও এমব্রয়ডারি কারখানাগুলোকে অন্য এলাকায় সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। এতে শ্রমিকদেরও সুবিধা হয়েছে। প্রান্তীয় এলাকায় তারা সাশ্রয়ী কিংবা কম ভাড়ায় থাকতে পারছেন। কমপ্লায়েন্স কারখানাগুলোর তো আবাসনের ব্যবস্থা আছে, কর্মীদের বাসা থেকে কর্মস্থলে পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। রাজধানীর ওপরও চাপ কমেছে। যানজট কমেছে, জরুরি ও পণ্য পরিবহন সহজ হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ এরই মধ্যে রাজধানীর বাইরে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করেছে। এমনকি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায়ও স্থায়ী ক্যাম্পাস আছে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ব্র্যাক-ইস্ট ওয়েস্টের মতো বিশ্বমানের খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবসতি পূর্ণ এলাকায় জনভোগান্তি বাড়াবে, এটি দুঃখজনক। নাগরিক দুর্ভোগ বিবেচনায় সরকার শূন্য সহনশীলতায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।

Discussion about this post