Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 9:42 am

রাজস্ব আহরণে বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে জোর দিন 

মাঠপর্যায়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, হয়রানি ও অনিয়মের কারণে ব্যবসায়ীদের নিয়মিত সমস্যায় পড়তে হয়। কারও অভিযোগ টার্নওভার করহার বৃদ্ধি নিয়ে। কেউ আবার ভুয়া মামলা নিয়ে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বন্দরে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা ও সার্ভার সমস্যা নিয়েও নানা অভিযোগের কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ জানান ব্যবসায়ীরা। মূলত ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা শুল্ক-কর ও কাস্টমস-সংক্রান্ত কী ধরনের সমস্যায় পড়েন, তা শুনতেই এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে নানা অভিযোগ জানালেও ব্যবসায়ীরা এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে প্রথমবারের মতো সরাসরি নিজেদের অভিযোগগুলো জানাতে পেরেছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে পারবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি ব্যবসায়ীদের অভিযোগের জবাবে এসব সমস্যার কথা স্বীকার করেন এবং প্রয়োজনীয় নিয়ম পরিবর্তনের আশ্বাস দেন। এমন উদ্যোগের সুফল কেবল ব্যবসায়ীরা পাবেন, তা নয়। দেশের রাজস্ব বাড়াতেও বড় ভূমিকা রাখবে বলেই ধারণা।

প্রচলিত আছে অনেক অফিসের চেয়ার-টেবিলও ঘুষ খায়। চেয়ার-টেবিলে ঘুষ খেলে সেবাপ্রত্যাশী যেমন যথাযথ সেবা পান না, তেমনই রাষ্ট্রও উপযুক্ত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। করদাতার সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে রাজস্ব আহরণের বিষয়ে একটি সাধারণ ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে কিছু অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এ বিভাগের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। করদাতা তাদের আবদারে রাজি না হলে অকারণে নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন বাহানা দেখিয়ে করদাতাকে হয়রানি করার কথা শোনা যায়। এনবিআরকে এসব বিষয়ের পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে হবে।

এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তরে যাওয়া সেবাপ্রত্যাশীদের অভিজ্ঞতা তিক্ত। রাজস্বকে বলা হয় জাতীয় উন্নয়নের অক্সিজেন। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহে এনবিআর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় লক্ষ্য অর্জিত হয় না। অংশীজনসহ সাধারণ মানুষের ধারণা, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময়ে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অভিযোগ দিন। আমরা ব্যবস্থা নেব। কিছু দৃষ্টান্ত তৈরি হলে এ ধরনের কাজ কমে আসবে।

ব্যবসায়ীরা অগ্রিম আয়কর সমন্বয় না হওয়া এবং ছোট ব্যবসার জন্য উচ্চ টার্নওভার করহার ও আমদানি-রপ্তানির সময় কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের হয়রানিসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এসব অভিযোগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা জরুরি। ভুয়া মামলায় ব্যবসায়ীরা বহু বছর আইনি লড়াইয়ের পর মুক্ত হলেও যে কর্মকর্তাদের কারণে এটি হয়, তাদের কোনো জবাবদিহি বা শাস্তি হয় না। ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি আমলযোগ্য অভিযোগ যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করতে হবে।