শেয়ার বিজ ডেস্ক : রাশিয়ার জ্বালানি তেল ক্রয়কে ইস্যুতে পরিণত করে চীনকে চাপে রাখার যে কৌশল নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা থেকে তাকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। যদি ট্রাম্প এই কৌশল ত্যাগ না করেন, তাহলে ফলাফল ‘ভালো হবে না’ বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি। খবর: আরটি।
গত সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘রুশ তেল কেনাকে ইস্যু করে বেইজিংকে চাপে রাখার যে কৌশল ওয়াশিংটন নিয়েছে, তা তাদের একতরফা চিন্তাভাবনা, গুন্ডামি এবং অর্থনৈতিক জবরদস্তির আরও একটি উদাহারণ। রাশিয়ার কাছ থেকে চীন সম্পূর্ণ বৈধভাবে তেল কিনছে এবং এটি অর্থনীতি, বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের অংশ। সর্বোপরি এর সঙ্গে চীনের জাতীয় স্বার্থ জড়িত এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে চীন কখনও পিছু হটবে না।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। আন্তর্জাতিক বাজারে রুশ জ্বালানি তেলের দামও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
তবে এই নিষেধজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখে চীন ও ভারত। বর্তমানে এ দুটি দেশ রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, রুশ তেল ক্রয়ের মাধ্যমে এ দুই দেশ রাশিয়াকে যুদ্ধের অর্থ জোগাচ্ছে। এর শাস্তি হিসেবে ইতোমধ্যে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি।
চীনের ওপর এখনও শুল্ক আরোপ করেননি ট্রাম্প, তবে বলেছেন, বেইজিং যদি অবিলম্বে রুশ তেল কেনা বন্ধ না করে, তাহলে চীনের ওপর ১০০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হবে।
বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ এবং ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও তিনি চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গত সোমবারের ব্রিফিংয়ে লিন জিয়ান বলেন, ‘অতীতে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে, জবরদস্তি ও চাপ কখনও হƒদয়-মন জয় করতে পারে না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানও করতে পারে না।’
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ বাড়াতে চীন ও ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দাবি, দেশ দুটি রুশ তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে রাশিয়ার সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত শুক্রবার জি-৭ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কানাডার অর্থমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেইন। আলোচনায় রুশ সম্পদ জব্দ করে তা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় ব্যবহার এবং রাশিয়ার ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার পথ খোঁজার বিষয়ে ঐকমত্য হয়।
বৈঠক-পরবর্তী এক বিবৃতিতে বেসেন্ট ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার বলেন, পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রের অর্থের উৎস বন্ধ করতে একক প্রচেষ্টা জরুরি। তবেই হত্যাযজ্ঞ থামানো সম্ভব হবে।
আগেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এর মাধ্যমে নয়াদিল্লিকে রুশ তেল কেনা বন্ধের চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন। তবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতা রক্ষায় বেইজিংয়ের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ থেকে বিরত থেকেছেন ট্রাম্প।
একই দিনে ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, পুতিনের প্রতি তার ধৈর্য শেষ হয়ে আসছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেননি।
তিনি বলেন, ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, তবে ইউরোপীয় দেশগুলোকেও অংশ নিতে হবে। ট্রাম্পের ভাষায়, আমাদের খুব শক্ত অবস্থানে যেতে হবে।

Discussion about this post