রাখাইনে গণহত্যা থেকে প্রাণে বাঁচতে আট বছর আগের এই দিনে বাংলাদেশে আসা শুরু হয়েছিল রোহিঙ্গাদের ঢল। এরপর দুবার দিনক্ষণ ঠিক হলেও তাদের আর নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। গত দেড় বছরে নতুন করে এসেছে আরও ১ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রাপ্তিও কমছে। কারণ আন্তর্জাতিক সহায়তা আগের মতো নেই। এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করছে। প্রথমটি শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার কক্সবাজারে। বাকি দুই সম্মেলনের একটি হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। অন্যটি হবে ৬ ডিসেম্বর কাতারে। বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়ে কয়েক দফায় লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে একদিকে মানবিক দায়িত্ব পালনের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে দীর্ঘমেয়াদে স্থানচ্যুত এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ, পরিবেশের ক্ষতি, অর্থনৈতিক বোঝা এবং অপরাধমূলক কাজের বৃদ্ধি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে চাপের মধ্যে ফেলেছে।
আন্তঃসীমান্ত সংঘাতের বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায় শরণার্থী। এই আশঙ্কা বাংলাদেশকেও উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছে। সব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকারও চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ক্যাম্পের মধ্যেই আবদ্ধ রাখতে। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও বুঝতে পারছে যে, ক্যাম্পে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এই সমস্যার আশু কোনো সমাধানও নেই।
আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্ষাকালে পাহাড়ধসের ঝুঁকি, শীতকালে আগুনে পুড়ে মরার শঙ্কা ও আর নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে তাদের। তহবিল সংকটের কারণে আশ্রয়শিবিরে তিন হাজার লার্নিং সেন্টার (শিশু শিক্ষাকেন্দ্র) বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্রয়শিবিরের ছয় লাখ কিশোর-তরুণ-যুবক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হলে তাদের একটি অংশ পাচারের কবলে পড়বে, কিছু অংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। সরকারের উচিত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে সম্মান ও নিরাপত্তা বিধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা