Print Date & Time : 11 August 2025 Monday 4:47 pm

লন্ডনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে বিক্ষোভ করায় ৩৬৫ জনকে আটক

শেয়ার বিজ ডেস্ক : লন্ডনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের প্রতি সংহতি জানিয়ে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ থেকে ৩৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। গত জুলাই মাসে ব্রিটিশ সরকার সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে এই ধরনের বিক্ষোভ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা বেড়েছে। খবর: আল জাজিরা।

গত শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার আগে পার্লামেন্ট স্কয়ার এলাকা থেকে এসব বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, তারা ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে প্রকাশ্যে সমর্থন’ করেছেন।

এর আগে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় পুলিশ জানায়, সময় লাগলেও যারা প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করছেন, তাদের সবাইকে আমরা গ্রেপ্তার করব।

বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, তাতে লেখা ছিল—‘আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি’ এবং ‘আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি।’ অনেকে শান্তিপূর্ণভাবে বসে থেকে প্রতিবাদ করছিলেন।

এই বিক্ষোভের আয়োজক ছিল ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ নামের একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ। তারা এক্স প্ল্যাটফর্মে জানিয়েছে, এই প্রতিবাদ ছিল গাজার বিরুদ্ধে চলমান হামলা এবং প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার বিরুদ্ধে।

‘টেররিজম অ্যাক্ট ২০০০’ অনুযায়ী, প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করাও এখন যুক্তরাজ্যে ফৌজদারি অপরাধ। এই আইনের আওতায় কারও শুধু একটি টি-শার্ট পরা বা হাতে প্ল্যাকার্ড থাকাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

আল জাজিরার লন্ডন প্রতিনিধি সোনিয়া গালেগো জানিয়েছেন, প্রতিবাদের আওয়াজ থামেনি। গ্রেপ্তার ও শাস্তির হুমকি সত্ত্বেও মানুষ প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

শুধু শনিবারের বিক্ষোভেই নয়, এর আগে জুলাই মাসে সংগঠনটির ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে আরও দুই শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একই দিন লন্ডনের রাসেল স্কয়ার থেকে হোয়াইট হল পর্যন্ত আরেকটি মিছিলের আয়োজন করেছিল প্যালেস্টাইন কোয়ালিশন। সেখান থেকেও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, কারণ তিনি একটি ব্যানারে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, শুধু একটি সাইন হাতে রাখার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের লঙ্ঘন।

লেবার পার্টির এমপি জন ম্যাকডোনেল এই গ্রেপ্তারকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকারের লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এক্স-এ তিনি লেখেন, ‘মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষার চেষ্টার জন্য গ্রেপ্তার করা লজ্জাজনক।’

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ৩৫০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদ এক খোলা চিঠিতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা এই পদক্ষেপকে দমনমূলক বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ইলান পাপে, ইউনিভার্সিটি অব গোল্ডস্মিথসের অধ্যাপক এয়াল ওয়েইজম্যান, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ মাইকেল হার্ট এবং লেখক-গবেষক জ্যাকলিন রোজ।