প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ : বছরে অর্ধ লাখেরও বেশি টাকায় জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার ঝাউদিয়া গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দিন। গতকাল সোমবার সকালে জমিতে এসে দেখতে পান পেঁপে গাছ মারা যাচ্ছে। চলতি বছর তিন বিঘা জমিতে পেঁপে গাছের বাগান তৈরি করে ভালো আয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু অসংখ্য ফুলফলে ভরপুর পেঁপে বাগানটি এখন ধূসর স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। জমিতে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা পচনশীল কীটনাশক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এতে ১ হাজার ৫০০ পেঁপে গাছের অর্ধেকই মারা গাছে, বাকিগুলোও মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী ওই কৃষক।
ভুক্তভোগী শৈলকুপা পৌরসভার ঝাউদিয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর ৬০ হাজার টাকায় বার্ষিক জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালান তিনি। প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগানটি গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে বেশিরভাগ গাছেই ধরা পেঁপে রয়েছে। সোমবার সকালে জমিতে এসে তিনি খেতে পান পেঁপে গাছ মারা যাচ্ছে। তিনি জানান, পরিপাটি যত্নে লালিত বাগান থেকে তিনি এ বছর ২০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখন সে স্বপ্ন অধরা হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল পরিবারের আশা-ভরসা। ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে পথে নামতে বাকি বলে কৃষক হাফিজ আর্তনাদ করেছেন। ঝাউদিয়া গ্রামের চাষি তারিক হোসেন জানান, হাফিজ উদ্দিন এনজিও থেকে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং লিজ নেয়া জমিতে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছেন। তার এমন ক্ষতিতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, গ্লাইফোসেট নামক তরল বিষে এ ধরনের ক্ষতি হয়। অন্তত তিন-চার দিন আগে ঝাউদিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাফিজ বিশ্বাসের বাগানে দুর্বৃত্তরা বিষ প্রয়োগ করতে পারে। তিনি আরও জানান, এ বছর তিন বিঘা জমিতে ১ হাজার ৫০০ গাছে অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হাফিজকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আর্কি সাহায্যের আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান বলেন, একজন সাধারণ কৃষকের সঙ্গে এমন শত্রুতা করা খুবই অন্যায়। ভুক্তভোগী ওই কৃষক থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানির পর থেকে ওই এলাকার কৃষকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে এ ধরনের অপকর্ম চাষিদের জন্য অশনি সংকেত। এখন মাঠজোড়া বিভিন্ন ফসল রয়েছে, হাফিজের বাগানে দুর্বৃত্তের হানা দেয়ার খবরটি অনেক বেদনাদায়ক এবং এলাকার কৃষকদের জন্য আতঙ্কজনক।