‘শিক্ষার নামে অবৈধ বাণিজ্য, রিমান্ডে বিএসবির বাশার’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকদের মনোযাগ কাড়বে বলেই ধারণা। শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তির নানাবিধ দুর্বলতা, অসঙ্গতি ও ব্যবসার ছকে নীতিহীন প্রতিযোগিতা অনেক পুরোনো সমস্যা। এ থেকে উত্তরণে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি, ক্লাসরুম, স্থায়ী তহবিল, যোগ্য পর্যাপ্ত শিক্ষকসহ আরও যেসব শর্ত অতি আবশ্যকীয় সেগুলোর যথায পরিপালন করা হয় কিন্তু সেটি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সম্যক অবহিত আছেন। শিক্ষার্থীর কাছ থেকে উচ্চহারে মাসিক বেতন আদায়সহ নানারকম ফি আদায় করার কায়দা-কৌশলের অভিযোগও রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
শিক্ষা খাতের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে বাশারের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে শুনানির একপর্যায়ে বিচারক বাশারের উদ্দেশে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, মোকাবিলা করতে গেলে তো সারা জীবন কারাগারে কেটে যাবে। হয়তো তাকে বাকি জীবন কারাগারেই কাটাতে হবে। কিন্তু তাকে ক্ষতিগ্রস্তদের কী উপকার হবে! স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাশার সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। এরা বিদেশি বিশ্বব্যিালয়ে ভর্তির সুযোগ, স্কলারশিপ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ র্অ হাতিয়ে নেয়। ভুয়া ভিসা প্রসেসিং, মনগড়া প্রতিনিধিত্ব ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হতো। অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অনেকের নামে বিদেশি কোনো বিশ্বব্যিালয়ে আবেদনই করা হয়নি। আবার অনেকে বিদেশে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছেন।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার খায়রুল বাশার ও তার পরিবারের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা র্অ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতেন এবং সেখান থেকে র্অ উত্তোলন করে স্থাবর সম্পদ ক্রয়, ব্যবসা পরিচালনা ও অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করেছেন।
প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল যেভাবে: আইইএলটিএস ছাড়াই ইউরোপে মাস্টার্সে ভর্তি! স্কলারশিপসহ স্পট অফার লেটার! এই রকম আকর্ষণীয় স্লোগান আর বিদেশি বিশ্বব্যিালয়ের লোগোসংবলিত পোস্টারেই শুরু হয় প্রতারণার গল্প। টার্গেট দেশের উচ্চশিক্ষা-ইচ্ছুক তরুণ প্রজন্ম, যারে স্বপ্ন বিদেশ পড়াশোনা করে জীবন গড়ার। বাশারের শিক্ষাবাণিজ্যের পরতে টাকা দেয়া শেষে ভিসা তো দূরের কথা ভর্তি নিশ্চিতকরণপত্র (অফার লেটার) বা টিউশন ফি’র রশি পর্যন্ত ছিল জাল! বাশারের প্রতিষ্ঠান দাবি করে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও হাঙ্গেরিসহ কয়েকটি বিদেশি বিশ্বব্যিালয়ের ‘সরকারিভাবে অনুমোদিত এজেন্ট’। এগুলোয় প্রভাবিত হয়ে শিক্ষার্থীরা কোটি কোটি টাকা টাকা জমা দেয়। এখন প্রতারণার বিষয়গুলো সামনে আসছে। বাশার ও দোষীরা আইনের আওতায় এসেছেন। এখন সর্বস্ব হারোনো প্রতারিতদের কতটা সহায়তা পান, সেটিও ভাবতে হবে। এমন ব্যবসায় জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

Discussion about this post