রোদেলা রহমান : বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানিকারক। কিন্তু এ খাত নির্ভর করে আমদানি কাপড়ের ওপর। দেশে রয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলস (বুটেক্স)। এ খাতের উন্নয়নে গত এক যুগে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারেনি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। সঠিক পরিকল্পনা, সময়োপযোগী উদ্যোগ এবং দুর্বল নেতৃত্বের কারণে এটি কোনো জাতেই উঠতে পারেনি। অথচ এটি আরএমজি খাতের বাতিঘর হতে পারত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুটেক্স এখনও চলছে ১৬ বছর আগের কলেজ স্টাইলে। সঠিক পরিকল্পনা, যোগ্য নেতৃত্ব ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগের অভাবে এটা নামে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের অনেক কলেজের চেয়েও নিম্নমানের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টেক্সটাইল মিল ও আরএমজি খাতের সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সেতুবন্ধ নেই, চীন, মালয়েশিয়া ও ভারতে বিশ্বের সেরা ১০ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ও সহযোগিতা নেই। নেই কোনো শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিনিময় চুক্তি। ফলে কেবল বাজেটস্বল্পতার কথা বলে দায় ইউজিসি ও সরকারের ঘারে চাপাচ্ছে বুটেক্স কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের শিক্ষকদের মাথায় বড় কোনো চিন্তা ও পরিকল্পনা নেই। তাদের মাথায় কেবল দলবাজি করে বড় পদ দখলের চিন্তা। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে শিক্ষাবিনিময় সহযোগিতা করে আমরা অবশ্যই এগোতে পারতাম। সবকিছু তো আর সরকারের মাথায় থাকে না। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে এ রকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
আরএমজি ও টেক্সটাইল খাতের নেতারা বলেন, বাংলাদেশের আরএমজি ও টেক্সটাইল খাত পুরোপুরি নির্ভর ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞদের ওপর। দেশে যোগ্য ও দক্ষ জনবলের অভাবে হাজারের ওপর বিদেশি এক্সপার্ট এ খাতে কাজ করছে। বুটেক্স এ শূন্যতা পূরণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
জানা যায়, চীনের ডংঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের এক নম্বর টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের জিয়াংনান বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃতীয় অবস্থানে উহান টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। পাঁচ নম্বরে রয়েছে মালয়েশিয়ার পুত্রা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) ও ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল টেকনোলজির (আইসিটি) অবস্থান শীর্ষ দশে। প্রতিবেশী এ দেশগুলোর সঙ্গে গত ১৫ বছর অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক থাকলেও শিক্ষাবিনিময় এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে আরএমজি খাত থেকে ৩৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়। এ আয়ের একটি বড় অংশ চলে গেছে কাপড় আমদানিতে। এ খাতে রয়েছে বড় তিনটি সংগঠন- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমইএ। সংগঠন তিনটি অর্থিকভাবে বেশ শক্তিশালী হলেও এ সংগঠনগুলোর সঙ্গেও বুটেক্স যৌথ কোনো শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে সেটা ধাপে ধাপে ঠিক হয়ে যাবে। শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের বাধ্য হয়েই পার্ট টাইম শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করাতে হয়। আমরা সরাসরি নিয়োগ দিতে পারি না। ইউজিসি’র বাজেট স্বল্পতার কারণে আমাদের এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের ইউজিসি প্রত্যেক বছর ৫২ কোটি টাকা দেয়, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আমরা এ কারণে শিক্ষার্থীদের সব চাহিদা মেটাতে পারি না।
তিনি বলেন, এছাড়া আমরা সামনে একটি প্রজেক্ট পেতে চলেছি, যার বাজেট এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যদি এই প্রজেক্টটি আমরা পাই, তাহলে আমাদের আর কোনো সমস্যা থাকবে না আশা করছি।
উপাচার্য আরও বলেন, ক্যান্টিনের খাবারের তদারকির জন্য আমরা পাঁচজনের একটি কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি থেকে প্রতিদিন একজন সদস্য ক্যান্টিন পরিদর্শন করবে। এরপরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে ক্যান্টিনের টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার আনা হবে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি বছরের পর বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি এমন শিক্ষা শাখা, যেখানে শুধু বই পড়ে বা তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করে দক্ষ হওয়া যায় না। প্রতিটি ধাপে হাতে-কলমে কাজ করার মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেয়া অপরিহার্য। স্পিনিং, উইভিং, ডাইং, প্রিন্টিং কিংবা ফিনিশিং-সব ক্ষেত্রেই আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ল্যাব কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা থাকলেও বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ টেক্সটাইল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হলেও এখনো কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বুটেক্স। যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে বুটেক্সের সব কার্যক্রমে। ক্লাস ও পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দায়সারা ভাব দেখা যাচ্ছে। পড়ালেখার মানোন্নয়নে নেই কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সরকার দেশের প্রথম টেক্সটাইল কলেজ হিসেবে ‘কলেজ অব টেক্সটাইলস টেকনোলজি’ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। এ খাতকে দক্ষ মানবসম্পদ দিয়ে সমৃদ্ধ করার জন্য ২০০৯ সালে একটি বিল পাসের মাধ্যমে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ২০১১ সালে এটি ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলস (বুটেক্স)’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি যোগ্য নেতৃত্ব ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে তৈরি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। শিক্ষক সংকট, পুরোনো ল্যাব, ক্যান্টিনের নিম্নমানের খাবার থেকে শুরু করে ভবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি-সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন লড়াই করছেন নানা সমস্যার সঙ্গে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুটেক্সের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তীব্র শিক্ষক সংকট। বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) ডিপার্টমেন্টে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই ডিপার্টমেন্টে ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র চার থেকে পাঁচজন। ফলে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে বুটেক্সের অনেক বিভাগে পার্ট-টাইম শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো হয়।
এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্টে অর্ধেকেরও কম শিক্ষক আছেন। একটি কোর্স শেষ হতে মাসের পর মাস লেগে যায়। অনেকে আবার অন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার কারণে এখানে নিয়মিত থাকেন না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘আমরা টেক্সটাইলের খুঁটিনাটি শেখার জন্য বুটেক্সে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখানে ক্লাস ক্যান্সেল হওয়া এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেক শিক্ষক অলসতার কারণে বা বাইরের ক্লাসে ব্যস্ত থাকার জন্য ক্লাস নেন না।’
শিক্ষার্থীরা জানান, ল্যাবে থাকা মেশিন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপডেটেড যন্ত্রপাতি আনার কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে একদিকে তারা পুরোনো বা ভাঙাচোরা মেশিনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের ইয়ার্ন ল্যাবে যে মেশিন আছে, তার বেশিরভাগই পুরোনো। কাজ শেখার জন্য আমরা বাইরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিটে গেলে বুঝতে পারি, আমরা বাস্তব অভিজ্ঞতায় কতটা পিছিয়ে আছি। এছাড়া আমাদের প্রত্যেকটা ল্যাবের ল্যাব রিপোর্ট হাতে লিখতে হয়, কিন্তু এসব রিপোর্ট আমরা ওয়েবসাইট থেকে দেখেই লিখি, তাহলে হাতে লেখার দরকার কী! এতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।’
তেজগাঁওয়ের ছোট ক্যাম্পাসে জায়গার সীমাবদ্ধতার মধ্যেই একের পর এক বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব অবকাঠামো নির্মাণ মূলত দেখানোর জন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে সুবিধা বাড়ার পরিবর্তে অনেক সময় উল্টো অসুবিধাই তৈরি হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাত্র ১১ একর জমির মধ্যে গড়ে ওঠা বুটেক্স ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও খেলার মাঠ নেই, পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নেই। অথচ এই সীমিত পরিসরে নতুন নতুন দালান তোলা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বুটেক্স ক্যাম্পাসের পুরোনো ভবনগুলো এখন শিক্ষার্থীদের জন্য সরাসরি নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি ভবনের ছাদ ও দেয়ালে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায়ই ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকেন। পরীক্ষার সময় বা ভিড়ের মধ্যে এ ধরনের দুর্ঘটনা বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে একাডেমিক ভবনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অবস্থাও করুণ। পুরো ভবনে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র নেই। গরমকালে ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা বসতে পারে না, অসহনীয় গরমে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার যুগে বুটেক্সের ক্লাসরুমগুলোও পিছিয়ে আছে। অধিকাংশ ক্লাসরুমেই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর অকেজো। যেগুলো আছে তার অনেকগুলো আবার ঠিকমতো কাজ করে না, পড়ে আছে মাসের পর মাস। ফলে শিক্ষকেরা লেকচার সøাইড বা ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে ক্লাস নিতে পারেন না। এতে করে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ নিয়ে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ প্রজেক্টর ছাড়া অনেক সময় বোর্ডে লিখে ক্লাস নিতে হয়। এটা কি কোনো আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশÑপ্রশ্ন তোলেন ওই শিক্ষার্থী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো শুধু উঁচু দালান বানানো নয়; বরং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আধুনিক শিক্ষণ সরঞ্জাম এবং আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
শিক্ষার্থীদের আরেকটি বড় অভিযোগ ক্যান্টিন নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যান্টিনে পরিবেশিত খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের এবং অস্বাস্থ্যকর। প্রায়ই খাবারের মধ্যে পোকামাকড় পাওয়া যায়, ভাত ও তরকারির গুণগত মানও নিম্নমানের। রান্নাঘরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না, থালা-বাটি অপরিষ্কার থাকে, ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এদিকে খাবারের দাম নিয়েও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সংকট একটা বড় সমস্যা। আমাদের একসঙ্গে একাধিক ডিপার্টমেন্ট সামলাতে হয়। এজন্য অনেক সময় সব ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, কিছু শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে গিয়ে বুটেক্সে নিয়মিত ক্লাস নেন না।
শিক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করেন, বুটেক্সের মূল সমস্যা হলো নেতৃত্বের ঘাটতি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব। দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণামূলক শিক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া এ সংকট কাটানো সম্ভব নয়।
একসময় দেশের টেক্সটাইল শিল্পের প্রাণকেন্দ হিসেবে বুটেক্সকে নিয়ে ছিল স্বপ্ন। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষক সংকট, ল্যাব অব্যবস্থা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা আর ক্যান্টিনের নিম্নমানের খাবারের কারণে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক হতাশ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘বুটেক্সকে আন্তর্জাতিক মানের টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হলে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাব সংস্কার, শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে মানসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
নেতৃত্ব সংকট ও অব্যবস্থাপনা দূর করে যদি মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া যায়, তাহলে এখনো বুটেক্স দেশের টেক্সটাইল খাতের জন্য দক্ষ জনবল তৈরির প্রাণকেন্দ হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে মাত্র চারটি হল, যা মোট শিক্ষার্থীর চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মেস বা ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মামুন কবির শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের ল্যাবে প্রতিটি মেশিনের পার্টস খুলে খুলে দেখাতে হয়। ফলে নতুন মেশিন আনলে সেটার পার্টস আবার নতুন করে খুলতে হবে, তাই পুরোনো মেশিন দিয়েই এই ল্যাবটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অবশ্যই বুটেক্স আধুনিক শিক্ষার দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলেও প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি এখনও সেখানে গড়ে ওঠেনি। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় হাতে-কলমে প্রযুক্তি শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে তাদের ক্যারিয়ারে। বিশেষ করে যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চায় বা আন্তর্জাতিক বাজারে চাকরি করতে চায়, তাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বাস্তব অভিজ্ঞতা ও আধুনিক টেকনোলজির সঙ্গে পরিচিতির ঘাটতি তাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে আধুনিক ল্যাবরেটরি ও প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেক্সটাইল শিক্ষায় ল্যাবরেটরি হলো মেরুদণ্ড। সেটি সচল না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্যÑদক্ষ জনবল তৈরি অসাধ্য হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘টেক্সটাইল বাংলাদেশের প্রধান শিল্প। কিন্তু এ শিল্পের জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয় সেটি আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারছে না, এটা খুবই দুঃখজনক। সরকার ও কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হতাশাই বাড়াবে।’

Discussion about this post