Print Date & Time : 16 July 2025 Wednesday 5:31 pm

শিশুর রক্তস্বল্পতা কেন হয়, কী করবেন?

শিশুর সুস্থতা ও পূর্ণাঙ্গ বিকাশে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া একটি বড় সমস্যা। রক্তস্বল্পতা মানে রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধা তৈরি হয়, যার ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এক গবেষণায় খো গেছে, বাংলাদেশে ৪২ শতাংশ শিশু শুধু আয়রনজনিত রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।

রক্তস্বল্পতার কারণ

আয়রনের অভাব: আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অপরিহার্য একটি খনিজ পদার্থ। যখন খাদ্যে পর্যাপ্ত আয়রন পাওয়া যায় না বা শরীর এটি শোষণ করতে পারে না, তখন রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

পুষ্টিহীনতা: শিশুর খাদ্যতালিকায় যদি ভিটামিন বি-১২, ফোলেট ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে, তাহলে রক্তস্বল্পতা হতে পারে।

পরজীবী সংক্রমণ: বিশেষ করে পেটের কৃমি শিশুদের শরীরে পুষ্টির শোষণ কমিয়ে দেয়, যা রক্তস্বল্পতার অন্যতম কারণ।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ: দুর্ঘটনা বা অন্য কারণে রক্তক্ষরণে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। মেয়েশিশুদের মাসিক ঋতুচক্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে অ্যানিমিয়া হতে পারে।

লক্ষণ ও উপসর্গ

শিশুরে রক্তস্বল্পতা শনাক্ত সব সময় সহজ হয় না। কারণ অনেক সময় লক্ষণগুলো সাধারণ মনে হতে পারে। তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখে সতর্ক হওয়া উচিত। এগুলো হলো ত্বক ফ্যাকাশে বা হলুদাভ হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা, খেলাধুলা করলে শ্বাসকষ্ট বোধ করা, মনোযোগের অভাব, অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া ও হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া, অরুচি, ওজন হ্রাস, মাথা ঘোরানো ও মাথাব্যথা।

নির্ণয়: রক্তস্বল্পতা নির্ণয়ে সবচেয়ে সাধারণ পরীক্ষা হলো সিবিসি। এতে রক্তের হিমোগ্লোবিন, রক্তকণিকার সংখ্যা ও আকার জানা যায়। প্রয়োজনে আয়রন, ভিটামিন বি-১২ ও ফোলেটের মাত্রা পরিমাপ করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া বা অন্যান্য রক্তজনিত রোগ শনাক্তে জিনগত (জেনেটিক) পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার: রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা মূলত কারণ নির্ণয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাসের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

পুষ্টি: শিশুরে খ্যাতালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, শাকসবজি, আমলকী, কমলা ও লেবু রাখা জরুরি।

আয়রন সাপ্লিমেন্ট: চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে।

কৃমিনাশক ওষুধ: পেটের কৃমি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত কৃমি নির্মূল কর্মসূচি গ্রামীণ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন: ভিটামিন বি-১২ ও ফোলেটের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করা দরকার।