শেয়ার বিজ ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নির্ধারণ করেছে, যা পূর্ববর্তী ৩৫ শতাংশ হারের তুলনায় ১৫ শতাংশ পয়েন্ট কম। এই চুক্তিকে বাংলাদেশের জন্য একটি “ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয়” হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, আজকের এই সাফল্য আমাদের জাতির দৃঢ়তা ও আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির এক শক্তিশালী প্রমাণ।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৩১ জুলাই (বাংলাদেশ সময় ১ আগস্ট) হোয়াইট হাউস একটি নথির মাধ্যমে এই পরিবর্তিত শুল্কনীতির ঘোষণা দেয়।
এ সিদ্ধান্ত আসে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে অনুষ্ঠিত বহুপাক্ষিক আলোচনার পর, যেখানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচক দল একাধিক দফা বৈঠকে বসে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল, যা বাংলাদেশ সরকারের কাছে অস্বস্তিকর ও অর্থনৈতিক চাপসৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। এরপর থেকেই দুদেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাই। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, শুল্ক হার প্রত্যাশিতের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা আমাদের আলোচকদের অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নের প্রতি অটুট প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই আলোচনা প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত জটিল, যেখানে কেবল শুল্ক ইস্যুই নয়, বরং অ-শুল্ক বাধা, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং বাজার প্রবেশাধিকারের শর্তাবলীসহ বিস্তৃত বিষয়ের ওপর কথা হয়।
আলোচকরা ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে একটি এমন চুক্তিতে পৌঁছেছেন যা “বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বজায় রেখেছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকারের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।”
প্রফেসর ইউনূসের ভাষ্যে, এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না, বরং আরও বৃহত্তর সুযোগ, দ্রুততর প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়ী সমৃদ্ধির দরজাও উন্মোচন করে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল।
তিনি এটিকে “জাতীয় দৃঢ়তা এবং সাহসী অর্থনৈতিক ভিশনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ” হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এই চুক্তি এমন একটি সময়ের প্রেক্ষাপটে এসেছে, যখন বাংলাদেশ বৈশ্বিক মন্দা, রাজনৈতিক রূপান্তর এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলায় কৌশলগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, ১৫ শতাংশ শুল্ক হ্রাস কেবল তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক স্বস্তিই এনে দেবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইটি ও কৃষিপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, এই শুল্ক চুক্তি ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সুবিধা পুনর্গঠনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে শুল্ক হ্রাস বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী অর্জন। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কৌশলে বাংলাদেশের সক্ষমতা, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং ভবিষ্যত অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনার এক যুগপৎ সাক্ষ্য বহন করে। দেশের ইতিহাসে এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক অর্জন নয়, বরং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বাংলাদেশের পুনঃউত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
আরআর/

Discussion about this post