শেয়ার বিজ ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকিকে গত সোমবার বিশ্ব পুঁজিবাজারগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করেছে।
নিউইয়র্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি আগস্টের শুরুতে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, তার প্রভাবে পুঁজিবাজারে প্রাথমিকভাবে কিছুটা পতন দেখা যায়। তবে পরে বাজার ঘুরে দাঁড়ায় এবং প্রযুক্তিভিত্তিক নাসদাক সূচক একটি নতুন রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলে।
স্পার্টান ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের পিটার কারডিলো বলেন, বাজার ধরে নিয়েছে, আগস্টের ১ তারিখের মধ্যে এসব শুল্ক কার্যকর হবে না। এ কারণে বাজারে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। ইউরোপীয় সূচকগুলো বেশির ভাগই নিম্নমুখী থাকলেও আতঙ্কজনিত বিক্রি দেখা যায়নি। লন্ডনের এফটিএসই সূচক বরং বৃদ্ধি পেয়েছে।
এশিয়ার বাজারগুলোর মধ্যে অনেকগুলো নিম্নমুখী থাকলেও, সাংহাই ও হংকং সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেন, বাজারে ধারণা, ট্রাম্পের ৩০ শতাংশ শুল্ক হুমকি কেবলমাত্র আলোচনার চাপ সৃষ্টির কৌশল, বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নয়।
এক্সটিবির গবেষণা পরিচালক ক্যাথলিন ব্রুকস বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন এটি ট্রাম্পের সাধারণ কৌশলগত নাটকীয়তা।’ তবে ক্যামারকোর সহযোগী পরামর্শক কিম হিউঅ্যাকার সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে শুল্ক আরোপ বাস্তবায়ন করতেও পারেন।’
ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন যে আলোচনায় অগ্রগতি না হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলারের (৭২ বিলিয়ন ইউরো) পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্পের হুমকি উপেক্ষা করায়, ব্যান্ডউইথ অন্যান্য খবরের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো সম্পদের জন্য সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রক পরিবর্তনের ফলে বিটকয়েনের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ১২৩,০০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
গত সোমবার ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির দিকেও মনোযোগ কে›্রীভূত হয়েছিল যে, যি মস্কো ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে তাদের যুদ্ধের সমাধান না করে তবে রাশিয়ার বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ‘খুবই কঠোর শুল্ক’ আরোপ করা হবে।
তেল ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞাকে সীমাবদ্ধ করে দেখেছিলেন এবং অপরিশোধিত তেলের দাঁম আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরে সম্ভাব্য বৃহত্তর বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চাহিদা কমার আশঙ্কায় পড়ে যায়।
শুল্ক হুমকির বাইরে বিনিয়োগকারীরা এখন দৃষ্টি রাখছেন জেপিমরগ্যান চেজ, ব্যাংক অব আমেরিকাসহ শীর্ষ মার্কিন ব্যাংকগুলোর আসন্ন আয় প্রতিবেনের দিকে। এই প্রতিবেদনগুলোতে ওঠে আসবে মার্কিন ভোক্তাদের বর্তমান আর্থিক অবস্থা এবং ব্যাংকগুলোর লেনদেন ও বিনিয়োগ ব্যবসার স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত যা বাজারের ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।
বাজার এখন মার্কিন সরকারের জুন মাসের ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ও খুচরা বিক্রির রিপোর্ট প্রকাশের দিকেও নজর রাখছে। এই প্রতিবেদনগুলো মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও সময়সূচি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরে প্রত্যাশা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফিউচার মার্কেট ইঙ্গিত েিচ্ছ, সেপ্টেম্বরেই ফেড সুদহার কমাতে পারে।
বিশ্লেষকরা জানান, বিনিয়োগকারীরা এই হুমকিকে একটি কৌশলগত চাপ হিসেবে দেখছেন, প্রকৃতপক্ষে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন। যদিও এর ফলে তেলের দামে কিছুটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

Discussion about this post