শেয়ার বিজ ডেস্ক : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে দণ্ডিত হলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে আদালত অবমাননার দায়ে গতকাল বুধবার শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১। এ দুজনকে গ্রেপ্তার বা তাদের আত্মসমর্পণের দিন থেকে এই দণ্ড কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দুজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ গতকাল এ রায় দেন।
এটি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় বলে গণমাধ্যমকে জানান চিফ প্রসিকিউটর
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ট্র্যাইব্যুনালে প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। এ সময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও বুলবুলের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি করেন। এ ছাড়া আদালত অবমাননার অভিযোগ বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান।
‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি,’ বলে ‘শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের’ একটি অডিও ভাইরাল হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে সেটি হাসিনার বলে সত্যতা পায়। পরবর্তী সময় এই বক্তব্যের বিষয়ে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয় ট্রাইব্যুনালে।
প্রসিকিউশনের করা সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি গ্রহণ করে ১৫ মে’র মধ্যে তাদের জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু ১৫ মে জবাব দাখিল না করায় তাদের ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ২৫ মে তারা হাজির না থাকায় প্রসিকিউশনের আবেদনে শেখ হাসিনাসহ দু’জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হাজির হওয়ার জন্য বহুল প্রচারিত দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর এই নির্দেশক্রমে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এএসএম রুহুল ইমরান স্বাক্ষরিত নোটিশটি ২৬ মে যুগান্তর ও নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। নোটিশে ৩ জুন সকাল ১০টায় ট্রাইব্যুনালে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব বা বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়। অন্যথায় তাদের অনুপস্থিতিতে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকাজ সম্পন্ন হবে। নোটিশের পরেও উপস্থিত না হওয়ায় বা জবাব না দেয়ার প্রেক্ষাপটে আজ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রায় দিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। ভয়াবহতম এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

Discussion about this post