Print Date & Time : 15 August 2025 Friday 4:57 am

শ্রম আইনে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত হোক

 দেশের শ্রম আইন সংস্কারে তাগিদ দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল বলেছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) সবার চাওয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কার করা হবে।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠক করে শ্রম আইন সংস্কারে এই তাগিদ দেয় মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদল। বিজিএমইএ বলেছে, তৈরি পোশাক খাতের শ্রম পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা বিজিএমইএর অন্যতম অগ্রাধিকার। এ লক্ষ্যে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক গড়তে ৮১টি  শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিজিএমইএ। সংবিধান নির্দেশিত বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের সব ধরনের শাসন মুক্তি। রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার সুনিশ্চিত হবে। আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, চব্বিশের জুলাইয়ের রক্তঝরা ছাত্র-শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাকর স্থানে প্রতিষ্ঠা করা। এই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রমিক অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে গঠন করে ‘শ্রম সংস্কার কমিশন’। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ইতিহাসে প্রথম এই ধরনের কমিশন গঠিত হয়েছে। এই প্রশংসাই। বাংলাদেশের শ্রম জগতে বিদ্যমান বৈষম্য ও প্রতিনিয়ত শ্রম আইন লঙ্ঘিত হওয়ায় আমাদের পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে। দেশের শ্রম খাতের বড় অংশীজন বিজিএমইএর দায়িত্ব বেড়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হলে তারাও উপকৃত হবেন। বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ পেতেই তারা শ্রমিকদের প্রতি যত্নবান হবেন এটা দুঃখজনক। শ্রমিকদের সম্মান, যৌক্তিক পারিশ্রমিক দেয়ার মানবাধিকারের অংশ।

শ্রমজীবীর নাগরিক অধিকার, জীবন-জীবিকার মর্যাদা, সমঅধিকার, প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন ও বৈষম্যবিরোধী সুযোগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে হতে হবে।  শ্রমিকের অধিকার ও মঙ্গল নিশ্চিতকরণে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে কর্মসংস্থান, শিল্পের উৎপাদনশীলতা-বিকাশ এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সঙ্গে। তাই এটি শুধু শ্রমিকের নয়, সমগ্র দেশ ও দশের স্বার্থেই জরুরি। শ্রমিকের অধিকার বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকারের অংশ। তেমনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে শ্রমমানের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এ দেশের অঙ্গীকারের অংশ। এর জন্য রাষ্ট্রের নীতি-আইন প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ-বাস্তবায়ন, সর্বজনীনতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির অনুসরণ অন্যতম প্রয়োজনীয় কাজ। লক্ষ্যভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার, শিল্প বিকাশ ও উন্নয়নের সুফলে শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের মাধ্যমেই বৈষম্যহীন-মর্যাদাকর বাংলাদেশ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে আমারা মনে করি। সরকার এ লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।