নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত শুক্রবার । অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল লুটপাট হওয়া পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গত এক বছরে সরকারের সদিচ্ছা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে পুঁজিবাজার থেকে হারানো আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বাজারে যে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছিল, সেটা স্বস্তিকর অবস্থায় আসছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও আগ্রহের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এটি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর আর্থিক পারফরম্যান্স, সুশাসন ও জবাদদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ। পুঁজিবাজারের সংকট দীর্ঘদিনের, সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত, কার্যকরী ও যুগোপযোগী সংস্কার। বর্তমান প্রেক্ষপটে এর বাস্তবায়ন পুরোপুরি দৃশ্যমান না হলেও সরকার, বিএসইসিসহ সব অংশীজনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আর সমন্বিত এ প্রচেষ্টার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পুঁজিবাজারে।
প্রায় দুই মাসের বেশি মাস ধরে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে। এই সময়কালে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় ছিল। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমান পুঁজিবাজারের এ চিত্রকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় দেশে পুঁজিবাজার কয়েক দিন বেশ উজ্জীবিত ছিল। যদিও তার কয়েক দিন পর সেই প্রত্যাশায় ছেদ ঘটেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দীর্ঘ ৯ মাস পর চলতি বছরের ১১ মে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজার নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বিএসইসি, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জসহ পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সব অংশীজন কাজ করে যাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগে অর্থনীতির কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়েছে এবং ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে। এর মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল পুঁজিবাজার। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার।
অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা, বিএসইসির বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ, সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জিরো-টলারেন্স নীতি অনুসরণ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে প্রায় তিন মাস বাজার ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। চলতি বছরের গত ৩ আগস্ট সূচকের বড় উত্থানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আবারও সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়িয়ে ৫ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। সেই সঙ্গে লেনদেনও ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা অতিক্রম করে।
গত বছরের ৭ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে। আর ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের দিন অর্থাৎ গত ৮ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচক ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে। এর পরের দিন গত ৯ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচক ৯১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৫ পয়েন্টে। পরে ১৯ আগস্ট পুনর্গঠিত বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের দায়িত্ব নেয়ার দিন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৫ পয়েন্টে। তবে ধারাবাহিক পতনের কারণে ওই সময় থেকে চলতি বছরের ২৮ মে পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক কমে অবস্থান নেয় ৪ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে। তবে সরকারের সহযোগিতা ও বিএসইসির নানামুখী উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার। এরই ধরাবাহিকতায় চলতি বছরের গত ৭ আগস্ট অর্থাৎ গত আড়াই মাসের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৫১৬ পয়েন্ট। তবে গত আড়াই মাসের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৭৯৩ পয়েন্ট।
বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে মোটা দাগে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলোÑপুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং আস্থা ফেরাতে অনিয়ম-কারসাজি-দুর্নীতি অনুসন্ধানে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে ১২টি কার্যপরিধি দেয়া হয়েছিল। বর্ধিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তারা সম্পূর্ণ প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছেন।
পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিশেষ পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সকে ১৭টি কার্যপরিধি দেয়া হয়। ইতোমধ্যে তারা ৩টি বিষয়ের ওপর চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছেন।
পুঁজিবাজারে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তদন্তের ভিত্তিতে নানান অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিশেষ করে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন হিসেবে জরিমানা করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে এ কমিশন।
ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস অনুযায়ী সেকেন্ডারি মার্কেটে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হয়েছে, যাতে বাজার নিজ গতিতে চলতে পারে। তবে কোনো অভিযোগ বা ম্যাল প্র্যাকটিস বা মিস কনডাক্ট হলে তখন তদন্ত করে দেখবে বিএসইসি।
এছাড়া পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যেকোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়েছে কমিশন। পুঁজিবাজারের নানা সমস্যা দ্রুত সমাধান ও প্রণোদনা বা সহায়তা পেতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে কমিশন। পুঁজিবাজারে ভালো মানের মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি আনার লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে এবং দেশের রেগুলেটরগুলোর মধ্যে ইন্টারকানেকশন ও কো-অর্ডিনেশন বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বধীন কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরকে মূল্যায়ন করতে হলে আমি শুরুতেই বলব, বিগত ১৬ বছরের যে ঘটনাগুলো ছিল সেটা নতুন করে এ বছরে নেই। এটা একটা বিষয় এবং আমাদের প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যে বার্তা নির্দেশনা আসছে, এর আগে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে এ রকম সুনির্দিষ্ট বার্তা নির্দেশনা আসেনি। এবার বাজেটে আমরা পুঁজিবাজার যে ধরনের সুবিধাগুলো পেয়েছি, বিগত বছরের সুবিধাগুলো চাওয়া হতো কিন্তু পাওয়া হতো না। এটা একটা পজিটিভ দিক। আবার অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্দেশনা দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি খেয়াল করে দেখবেন, সম্প্রতি বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, পিডিবির চেয়ারম্যান এবং ডেসকোর চেয়ারম্যান মিলে জয়েন্ট মিটিং করেছেন সরকারি কোম্পানিগুলোকে কীভাবে পুঁজিবাজারে আনা যায়। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য জরিমানা করা হয়েছে। আমি যদি বলি এগুলো সবগুলো ভালো দিক।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এছাড়া তারা (বিএসইসি) এখন অনেক কিছুই ডিসক্লোজার করছে ট্রান্সপারেন্ট পদ্ধতিতে, যেটা আমি পজিটিভ বলব। এখন ওয়েবসাইটে এমনভাবে তথ্য দেয়া আছে, যে কেউ ওয়েবসাইটে গিয়ে খুব সহজেই বুঝতে পারবে কী কী ঘটেছে বা কী কী ইনফরমেশন আছে। আমি যদি বলি ডিসক্লোজার বা অন্যান্য তাদের প্রচেষ্টা সব মিলিয়ে আগানো। আমি এক বছরে মূল্যায়ন করতে গেলে ক্লিয়ারলি বলি, দুঃশাসনের চেয়ে সুশাসন এগিয়ে রয়েছে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কিন্তু দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ দুর্নীতির বিপক্ষে বিচার হবে এবং জরিমানা করা হয়েছে অলরেডি। এ জরিমানাগুলো আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এর আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিস্ট আসত কিন্তু কারও পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হতো না। এই ব্যবস্থাগুলো নিলে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও তাদের প্রতি আস্থাশীল হবে। নতুন করে অনৈতিক কাজে কেউ করার সাহস পাবে না।’
এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘আর চলতি বছরের জুন মাসে পুঁজিবাজারে লেনদেন ছিল ২৫০ কোটির ঘরে, সেখানে এখন লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। এটা নিশ্চয়ই একটা সুফল। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার কমার কারণে এই সুবিধাটা পাওয়া যাচ্ছে। এতে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ার মুভ করছে। এখন ব্যক্তি কেন্দে কোনো কিছু হচ্ছে না। আগে যেমন অমুক ভাই, তমুক ভাই ছিল, এখন বাজারে কোনো ভাই নেই। এখন বাজার সবার।’
তিনি আরও বলেন, ‘খারাপ দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑতারা (বিএসইসি) যেহেতু রিফর্মের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তারা নতুন করে আইপিও আনার চিন্তা করেনি। সেক্ষেত্রে তারা একটি কাঠামোর মাধ্যমে নতুন আইপিও আনার কথা ভাবতে পারত। আবার বিএসইসির কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের যে বিষয়টা ঘটেছে, সেটা একটা অনাকাক্সিক্ষত বিষয়, যেটা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গেলে এ বিষয়গুলা বিবেচনা করতে হবে, ভুল-ত্রুটি যেটাই থাক; এটাকে একটা সীমাবদ্ধতার ভেতরে মিটমাট করে ফেলা উচিত ছিল।’
আল-আমিন বলেন, ‘এক বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীলতার পথে অবশ্যই রয়েছে। এছাড়া আগে যেমন অস্বস্তিকর বাজার ছিল, এখন সেটা ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বস্তিকর রূপ নিয়েছে।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মতে, গত এক বছরে কিছু অর্জন অবশ্যই আছে। আমরা রিফর্ম চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা এখনও পুরোপুরি আসেনি। যত তাড়াতাড়ি আসবে ভেবেছিলাম, তত তাড়াতাড়ি সেটা হয়নি। এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। আর অর্জনের কথা যদি বলি, আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে মার্কেটে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এটা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা যথেষ্ট পরিমাণ উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের যে একটা বাজে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। পুঁজিবাজারে আমরা আস্থা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছিলাম, সেই আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন কবে হবে সে ঘোষণাটা আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। নির্বাচন সম্পন্ন হলে আমরা আশা করি, একটা স্থিতিশীল সরকার আসবে। সেইসঙ্গে একটা দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যানিং ও রোড ম্যাপ দেবে, যা স্টক মার্কেটকে কীভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের আশা। বর্তমান পুঁজিবাজারের গতিবিধি দেখে ইতিবাচক প্রবণতা মনে হচ্ছে। এটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, ‘বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দুটি কাজ হাতে নেয়। একটি হলো, অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন, আরেকটি হলোÑটাক্সফোর্স গঠন। এর মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি তাদের দেয়া ১২টি বিষয় তদন্ত করে বিএসইসিতে জমা দিয়েছে। সেটার এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন চলমান রয়েছে। আর টাক্সফোর্সকে সংস্কারের জন্য যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে পাবলিক ইস্যু রুলস, মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ও মার্জিন রুলসের বিষয়ে সুপারিশ জমা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কমিশন কাজ করছে এবং সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই রুলসগুলো পাবলিক অপিনিয়নের জন্য প্রকাশ করা হবে। এ সংস্কারের মূল লক্ষ্য পুঁজিবাজারের সুশাসন যথার্থ করা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, যাতে মার্কেটটা সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়। মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজদের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয়করণ করা হয়েছে, সেখানে বিএসইসির অযাচিত কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আর কমিশন কোনো জায়গায় ছাড় দিচ্ছে না। যারা ফাউল প্লে করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এছাড়া সূচক বাড়া বা কমার বিষয়ে বিএসইসি কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে পুঁজিবাজারে সুশাসন ও আস্থা বাড়ায় পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’
গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেটের সম্প্রসারণ: টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীলতার পথে এগুচ্ছে। সবাই সম্মিলিতভাবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলে ভালো কিছু হবে।’

Discussion about this post